Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সাম্প্রদায়িক নিপিড়ন ও আন্দোলন

সামাজিক ন্যায়বিচার: "আমাদের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি"

সামাজিক ন্যায়বিচার:
গ্রাফিকস দেশ দেশান্তর ২৪.কম

ছোট থেকেই সংখ্যালঘু শব্দটা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। খুবই খারাপ লাগে এই শব্দটি শুনতে। আমার মত অনেকে এই পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না। আমরা সবার মত এই দেশের নাগরিক, এই বিশ্বের নাগরিক। নাগরিক হিসেবেই সবার মত সমঅধিকার ও নিরাপত্তা আমরা চাই, আলাদা কোন বিশেষ সুযোগ বা কারও অনুগ্রহ না।

এবার আসি আন্দোলনের বিষয়ে। অবশ্যই কোন বিশেষ গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ হলে সে গোষ্ঠীর মানুষ আন্দোলনে নামবে, নামাটাই খুব স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। তবে সে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য এটা দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, অসহায়ের উপর সামর্থ্যবানদের অত্যাচারের অংশ হিসেবে নিয়ে আসলে অত্যাচারিত সবাই যুক্ত হতে পারে সহজে আর নিজেরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অন্যকে অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকার একটা মনন গড়ে উঠে।আন্দোলনগুলো ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিচালিত হওয়া দরকার। হিন্দুদের উপর অত্যাচার হলে হিন্দুরা আন্দোলন করবে, গাজায় ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের হামলা হলে মুসলমান প্রতিবাদ জানাবে এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া জরুরি। অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে দেখে,মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতনের বিপরীতে আন্দোলনের ও ঘৃণার একটা নির্মোহ মনন গড়ে তুলতে না পারলে এই সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের গ্রামে অসাম্প্রদায়িকতার একটা সুন্দর চর্চা অনেক আগে থেকেই ছিল,আমরা ছোট থেকে দেখেছি যেকোন দূর্যোগকালে আমাদের আশেপাশের মুসলমানরা আমাদের মন্দির পাহাড়া দিয়েছে, আমাদের আশ্বস্ত করেছে। একইভাবে কোন গরীব মুসলমানের বিপদে হিন্দুরা এগিয়ে গিয়েছে। যদিও এটাকে মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে গিয়েছে এভাবে দেখলেই ভালো। আমার প্রায়ই মনে হয়, সংখ্যালঘু শব্দটা যারা এমন অত্যাচার, নিপীড়ন ও বিভাজন সৃষ্টি করে তাদের জন্য ব্যবহার করা উচিত। আমার এক ছাত্র আমাকে নালিশ করেছে সনাতনীদের প্রতিবাদ মিছিলে একজন গরম পানি মেরেছে বিল্ডিংয়ের উপর থেকে। আমি তাকে বলেছি ঐ গরম পানি নিক্ষেপকারী সংখ্যালঘু। কেননা আরও অনেকেই তো ছিল, তারা তো গরম পানি মারেনি। একদল কুচক্রী ও সুবিধাভোগী লোকের জন্য কেন আমরা সবাইকে দোষী ভাববো? যদিও এমনটা ভাবার একটা কারণ আমি এর উপরে একটু বলেছি। আবার বলছি নিচে।

একজন হিন্দু বা মুসলিম ধর্মের লোক যখন অন্য ধর্মের লোকের বিপরীতে শুধু ধর্মীয় কারণে অত্যাচার চালায়, তখন যদি বাকিরা তার বিপরীতে না দাঁড়ায় বা প্রতিবাদ না করে অথবা তার অবস্থান স্পষ্ট না করে তখন অত্যাচারের পক্ষে মৌনতাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নেয়া হয়। তখন অত্যাচরিত লোকটি ভাবে, চুপচাপ লোকগুলোও হয়তো এমনই। এভাবেই একটা দূরত্ব ও অসহায়ত্ব সৃষ্টি হয়, আর অত্যাচার না করেও তার দোষ সবার উপর বর্তায়।

তাই যেকোন অত্যাচারকে হোক তার চরিত্র সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অথবা মানবিক, সে যে স্তরেরই হোক না কেন, তাকে প্রথমত অত্যাচার হিসেবে স্বীকার করে তার বিপরীতে দাঁড়ানোর একটা ঐক্যবদ্ধ চেতনার জন্ম দেয়া দরকার। অত্যাচারের বিপরীতে লড়তে লড়তে আমাদের ঐক্য গড়ে উঠবে। অত্যাচারীদের সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে, চুপ থেকে তাদেরকে সহায়তা না করে বরং তাদের বিপরীতে লড়াইয়ের মাধ্যমে ঐক্যের শক্তি গড়ে উঠলে, যারা নিজেদের স্বার্থে একটা বিভাজনের সুর সমাজে গড়ে তুলতে চাই, তাদের ছন্দপতন ঘটবে।

লেখক: মিশু দত্ত

প্রিয় পাঠক, আপনিও দেশদেশান্তর২৪.কম অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। আত্মকথা, লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-[email protected]-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।
আত্মকথা ও মতামত উভয়ই লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত । লেখকের মতামতের সাথে দেশদেশান্তর২৪.কম এর কোন সম্পৃক্ততা নেই।

 


কেএ

আরও পড়ুন