চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ চায় সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চাইছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের একটি অংশ চাইছে সিটি করপোরেশন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যমান আইনের সংশোধন করা না হলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরের বড় একটি অংশজুড়েই বন্দর ও বন্দরসংক্রান্ত বিভিন্ন স্থাপনার অবস্থান। বন্দরের কাজে ব্যবহৃত দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন চলাচল করে এই নগরীর বিভিন্ন সড়কে। ফলে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে সড়ক। এতে সংস্কারে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে সিটি করপোরেশনের। সেবা খাতে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বেশি গুরুত্ব পায় চট্টগ্রাম বন্দর। এসব সেবা অব্যাহত রাখতে বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দাবি করেছে সিটি করপোরেশন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের বাৎসরিক আয়ের এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ চেয়ে গত ২০ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফলে এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সড়ক-মহাসড়কগুলো সচল রাখা ও এর সার্বক্ষণিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক ৬-১০ টন বোঝার গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও ৫০-৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। হাজার হাজার ট্রাক-লরিসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় নগরীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর, জেটি থেকে প্রতিনিয়ত ভিআইপি বিমানবন্দর সড়কে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী সড়কগুলো এ কারণেই প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। ভারী যানবাহনের কারণে নিয়মিত রাস্তা-কালভার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যাতে নগরবাসীর চলাচলে যানজটসহ চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণের চলাচলের জন্য সুষ্ঠু সড়ক ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। এসব রাস্তাঘাট সংস্কার করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন যা সিটি করপোরেশনের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়।’
‘এ প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দরের বাৎসরিক আয় থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রধান সড়ক, কালভার্ট ও টেকসই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে কার্যকর অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যা বন্দরের সুষ্ঠু কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জনগণের চলাচলের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নসহ চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন, হেলদি সিটি হিসেবে গড়তে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ চেয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এটা সিটি করপোরেশনের পাওনা। বন্দরেরই উচিত এ টাকাটা সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেওয়া। এর আগে বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গেও এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বন্দর তো সব জায়গায় টাকা দিচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পাওনা কেন দেবে না? বন্দরের বড় বড় গাড়িগুলো কিন্তু সিটি করপোরেশনের রাস্তা দিয়ে চলছে। আমাদের সকল লজিস্টিক সাপোর্ট বন্দরকে দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করতেই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ চলে যায়। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলেও তদবির করে ন্যায্য দাবি আদায় করবো।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিগত সময়ে খোরশেদ আলম সুজন যখন প্রশাসক হিসেবে ছিলেন তখন সার্ভিস চার্জ হিসেবে এক শতাংশ সিটি করপোরেশনের জন্য দাবি করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান আইন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০২২, যেটার প্রেক্ষিতে আমরা চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা করি। এ আইনে এটার প্রভিশন না থাকার কারণে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এ ছাড়া কার্গো বা খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। বন্দরের পণ্যভর্তি কনটেইনারের বেশিরভাগই পরিবহন হয়েছে সড়কপথে।
জানা গেছে, এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ শতাংশ আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে একাধিক মেয়র এ দাবি জানান।
এএজি