Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা রবিবার, ১২ মে ২০২৪

ঘুরে আসুন পাহাড়ের মায়াজাল খাগড়াছড়ি

ঘুরে আসুন পাহাড়ের মায়াজাল খাগড়াছড়ি
ছবি: দেশদেশান্তর২৪.কম গ্রাফিক্স

ভ্রমণপ্রিয় মানুষরা সাধারণত খুবই প্রাণবন্ত ও উদ্যমী হয়। তারা সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। তারা নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকে। ভ্রমণ হলো এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, নতুন নতুন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা,নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া- সবকিছু মিলিয়ে ভ্রমণ এক অসাধারণ আনন্দের উৎস। তাই হৃদয় ও মনকে উৎফুল্লো রাখতে ঘুরে আসুন মায়াজাল খাগড়াছড়িতে।

খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের একটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা। এটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং আদিবাসী জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। খাগড়াছড়িকে "পাহাড় কন্যা" নামেও ডাকা হয়। খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি পার্বত্য জেলা। এটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। খাগড়াছড়ির পাহাড়, ঝর্ণা, বনাঞ্চল, এবং আদিবাসী সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে এক অপার আকর্ষণ।খাগড়াছড়ির পাহাড়গুলো সবুজ গাছের সমারোহে ছেয়ে গেছে। পাহাড়ের গায়ে উঁচু উঁচু গাছগুলো যেন আকাশকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে চারদিকের অপরূপ দৃশ্য যে কারো মনকে বিমোহিত করবে।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র- বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়ের চূড়া থেকে খাগড়াছড়ি শহর এবং এর আশেপাশের পাহাড়-পর্বতমালাগুলির অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। রহস্যময় সুরঙ্গ- আলুটিলা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই সুরঙ্গটি স্থানীয়দের কাছে "মাতাই হাকর" নামে পরিচিত। এই সুরঙ্গটি প্রায় ৩৫০ ফুট লম্বা এবং এর প্রস্থ ১৮ ফুট। সুরঙ্গের ভিতরে প্রায় নিকষ কালো অন্ধকার। গুহার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত একটি ঝর্ণা গুহার পরিবেশকে আরও মনোরম করে তোলে। আলুটিলা সুরঙ্গের সৃষ্টি সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এই সুরঙ্গটি প্রাচীনকালে এক রাজার রহস্যময় গুপ্তধন লুকানো ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, এই সুরঙ্গটি একসময় এক আদিবাসী জাতির আশ্রয়স্থল ছিল।

তবে, সুরঙ্গের সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তারা মনে করেন, এই সুরঙ্গটি হয়তো প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে, অথবা প্রাচীনকালে মানুষের তৈরি কোন কৃত্রিম গুহা হতে পারে।

আলুটিলা সুরঙ্গটি পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ। সুরঙ্গটি ঘুরে দেখতে পর্যটকদেরকে মশাল বা টর্চলাইট ব্যবহার করতে হয়। সুরঙ্গটিতে প্রবেশের জন্য পর্যটকদেরকে টিকিট কিনতে হয়। 

রিছাং ঝরনা- আলুটিলার পাদদেশে এই ঝরনাটি অবস্থিত। স্থানীয় মারমারা ঝরনাটিকে রিছাং ঝরনা নাম দিয়েছে। এ ঝরনা থেকে কিছু দূরে প্রায় ৩০ হাত উচ্চতার আরো একটি ঝরনার দেখা মিলবে। পাহাড় আর সবুজের বুক চিরে ঠাণ্ডা পানি অনবরত দুই ঝরনা ছুটে চলছে।

দেবতা পুকুর- জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাইসছড়ির নুনছড়িতে ৭৫০ ফুট উপরে অবস্থিত একটি ভিন্ন প্রকৃতির স্বচ্ছ পানির অপূর্ব প্রাকৃতিক পুকুর। স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরাদের মতে, পাহাড়ের উপরের এই পুকুরের পানি কখনো কমে না এবং পানি পরিষ্কারও করতে হয়না বলে তার নাম দিয়েছে মাতাই পুখুরি। অর্থাৎ দেবতা পুকুর। বছরের অধিকাংশ সময় পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায় এ পুকুরে। তবে নববর্ষ বা বৈসাবির দিনগুলোতে হাজার পর্যটকের দেখা মেলে এখানে।

অরণ্য কুটির- খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এ বৌদ্ধ মন্দির। এখানে দেখা যাবে দেশের অন্যতম বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি। অরণ্য কুটিরে রয়েছে ৪৮ ফুট উচ্চতার বাংলাদেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি। বিশাল এলাকা জুড়ে সবুজের পাশাপাশি এ মূর্তি ছাড়াও আরো অনেক মূর্তি দেখা মিলবে।

তৈদু ছড়া ঝরনা- খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও দীঘিনালা উপজেলার সীমান্তস্থল দুর্গম সীমানা পাড়া গ্রামে অবস্থিত তৈদুছড়া ঝরনা। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে এ ঝরনায়। অ্যাডভেঞ্চার এ যাত্রায় যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রা। শেষ পর্যায়ে দেখবেন বিশাল বিশাল হাতির মাথা আকৃতির পাথরের সারি। তারপর বিশাল সেই তৈদু ছড়া ঝরনা। ঝরনার সেই পানির প্রবাহ দিয়ে গেলে দেখতে পাবেন আরো একটি সুউচ্চ ঝরনা।

জেলা পরিষদ পার্ক- জেলা সদরের জিরো মাইল এলাকায় প্রায় ২২ একর জায়গাজুড়ে এই পার্কটির অবস্থান। দুই পাহাড়ের সংযোগে এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ, রয়েছে বাচ্চাদের জন্য কিডস জোন, রয়েছে পর্যটন কটেজ। পার্বত্য জেলা পরিষদের সরাসরি তত্বাবধানে পরিচালিত এই পার্কে রান্নাবান্নাসহ পিকনিক করার আদর্শ জায়গা।

যাতায়াত ব্যবস্থা- ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে বিভিন্ন সমিতির আরামদায়ক বাস ছাড়ে। যেমন এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি, শ্যামলী, স্টার লাইন ইত্যাদি। ঢাকার সায়াদাবাদ, কমলাপুর, ফকিরাপুল, গাবতলী, কলাবাগান, টিটি পাড়া থেকে টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়। আবার ট্রেনে আসতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনে এসে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে বাসের টিকিট সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি আসা যায়।

কোথায় থাকবেন- খাগড়াছড়িতে থাকার ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন পর্যটন মোটেল। তাছাড়া জেলা সদরে ব্যক্তি মালিকানাধীন শৈল সুবর্ণ, হোটেল জিরান, নিলয়, ফোর স্টার, লবিয়তে সহনীয় ভাড়ায় থাকা যায়।

কীভাবে ঘুরবেন- শহরেই চাঁদের গাড়ি, কার, মাইক্রো পাওয়া যায়। দরদাম করে ঘুরে আসতে পারেন পর্যটন এলাকাগুলো।

 

 
এমআইপি

নামাজের সময়সূচী

রবিবার, ১২ মে ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪