জাবিতে সিনিয়রকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ জুনিয়রের বিরুদ্ধে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সিনিয়রকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দুই জুনিয়রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (৫১তম আবর্তন) শিক্ষার্থী সজিব এবং একই বিভাগের শিক্ষার্থী মুয়াজ।
গত শনিবার (০৪ মে) রাস্তায় সাইড দেওয়া না দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইংরেজি বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের এক ছাত্রীকে গালিগালাজ ও হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী নূর-এ সুলতান ওরফে রিফাতের বিরুদ্ধে। একই ঘটনার সমাধান করতে গিয়ে রিফাতকে ওই ছাত্রীর বন্ধু এবং ইমিডিয়েট সিনিয়ররা মিলে মারধরের পর পানিতে চুবিয়ে হত্যা চেষ্টার পালটা অভিযোগ উঠেছে।
দুপক্ষের অভিযোগপত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার ওই ছাত্রী এবং তার বন্ধু অরিত্র গুহ জয় বাংলা গেইটের খাবারের দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় পিছন থেকে রিফাত রাস্তায় সাইড দেওয়ার জন্য কয়েকবার বলেন। তখন তারা রাস্তা থেকে সরে সামনে যাওয়ার জন্য জায়গা দিয়ে দেন। রিফাত সামনে এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে রাস্তা ব্লক করে হাঁটতে নিষেধ করেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে রিফাত ওই ছাত্রীকে বেয়াদব বলে তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। তখন তারা পরিচয় দিতে গড়িমসি করেন। এক পর্যায়ে পরিচয় দিলে ওই ছাত্রী ও তার বন্ধু ৮ বছরের জুনিয়র জানার পর রিফাত মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এবং পাশে খাবার দোকানে থাকা একটি চেয়ার তুলে ভুক্তভোগী ছাত্রীর দিকে আঘাত করার চেষ্টা করেন।
পরে ওই ছাত্রী ঘটনাটি তার অন্যান্য সহপাঠী এবং ইমিডিয়েট সিনিয়রদের (৫১ তম ব্যাচ) জানান। এছাড়া জয় বাংলা ফটক থেকে রিকশা করে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্ত্বর-এ যেতে চাইলে পথের মধ্যে রিফাত পরিবহণ চত্বর এলাকায় রিকশা থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ছাত্রী রিকশা না থামিয়ে কলা ভবন এলাকায় গিয়ে বিষয়টি তার ইমিডিয়েট সিনিয়রদের জানান। তখন ওই ছাত্রীসহ কয়েকজন সিনিয়র এবং তার সহপাঠীরা মিলে পরিবহণ চত্বরে গিয়ে অভিযুক্ত রিফাতের সঙ্গে দেখা করেন। এদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের ৫১ তম ব্যাচের (ওই ছাত্রীর ইমিডিয়েট সিনিয়র) শিক্ষার্থী সজিব রিফাতকে ওই ছাত্রীর কাছে সরি বলতে বলেন। তখন রিফাত বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে কথা কাটাকাটি করেন। এক পর্যায়ে রিফাত ও সজিব দুই দফায় মারামারিতে জড়ান। শেষ দফায় রিফাতকে (৪৫ ব্যাচ) পরিবহণ চত্বরের পাশের জলাশয়ে ফেলে পানিতে চুবানি দেন সজিব।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ওই ভাই (রিফাত) আমাদের কাছে সাইড চাইলে আমরা সাথে সাথে সরে যাই। কিন্তু তিনি আমাদের গালিগালাজ করতে থাকেন এক পর্যায়ে চেয়ার তুলে মারতেও যান। তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
এ ঘটনার সমাধানে গিয়ে মারধরে জড়ানো ভুক্তভোগী ছাত্রীর ইমিডিয়েট সিনিয়র ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সজিব বলেন, আমাদের বিভাগের জুনিয়রকে গালিগালাজ করছে তাই আমরা ট্রান্সপোর্টে (পরিবহণ চত্বর) গিয়েছিলাম বিষয়টি সমাধান করার জন্য। সেখানে পৌঁছে দেখি ওই ভাই নেশা করতেছেন। আমি পরিচয় দেওয়ার পর তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে মারধর শুরু করেন। আমার গেঞ্জি তিনি ছিড়ে দিয়েছেন। আমাকে যখন মারধর করে তখন দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয় এবং আমরা পানিতে পড়ে যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নূর-এ সুলতান রিফাত বলেন, গতকাল বিকেলে জয় বাংলা ফটক দিয়ে আমি যাচ্ছিলাম। তখন রাস্তা ব্লক করে ওই ছাত্রী ও একজন ছেলে হাত ধরে খুবই স্লো-মোশনে হাঁটছিলেন। তখন আমি তাদের কাছে কয়েকবার সাইড দিতে অনুরোধ করলে তারা আমার উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে তাদের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। তারা বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিতে থাকেন। অবস্থা ভয়াবহ আঁচ করতে পেরে আমি সেখান থেকে পরিবহণ চত্বরে চলে আসি। তারপর তারা বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসে ১২ থেকে ১৫ জন মিলে আমাকে গণপিটুনি দেয়। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। আমি হাঁপানি রোগী। তারা আমাকে ময়লা পানিতে চুবানি দিয়েছে।
অভিযুক্ত সজিব গণমাধ্যমকে জানায়, আমি গেছিলাম আলাপ করতে কিন্তু তিনি আমাকে সেই সুযোগ দিলেন না, তিনি আমার সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেয় এবং মেয়েটিকেও মারতে চাইছিলো।
অভিযোগ স্বীকার করে মুয়াজ বলে আমি যখন গেছিলাম তখন আমাদের-জুনিয়র ব্যাচের মেয়েটি কান্নাকাটি করছিলো। সজিবকে মেরে গুরুত্বর আহত করে। তখন আমি উত্তেজিত হয়ে যায়। তবে লেকের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে আমি ছিলাম না। ওখানে কেবল সজিব ছিলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মধ্যে লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির সিকদারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিব।
টিএ