রকস্টারের জীবন নিয়ে ‘আজব’ এক ছবি
ঘোষণা না দেয়া হলেও ব্যান্ড জগতের অতি পরিচিত এক শিল্পীর ‘ছায়া জীবন’ (বায়োপিক নয়) নিয়ে নির্মিত ছবি ‘আজব কারখানা’। রক ধাঁচের এক গায়ককে নিয়ে লোক সংগীত বা এদেশের মানুষের মূলের দিকে যাত্রার এক অমীমাংসিত ও শেষমেশ ধীরগতির এক ছবি ‘আজব কারখানা’।
রকস্টারের নেশাময় জীবন ও নারীপ্রীতির এক ‘আজব’ ছবি ‘আজব কারখানা’। ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া প্রামাণ্যচিত্র ‘জন্মসাথী’-খ্যাত শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত এক ছবি ‘আজব কারখানা’। হেলাল হাফিজের কবিতা থেকে গান করা অনুদানের ছবি ‘আজব কারখানা’।
রকস্টার রাজিব হাসান। দেশব্যাপী তার নাম ও ক্রেজ। সে সারাদিন মদ পান করে। স্ত্রী সন্তান থাকলেও গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সাঁতার কাটে, লং ড্রাইভে যায়। রাজিবকে একটা টেলিভিশন চ্যানেল থেকে লোকসংগীত ভিত্তিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। রাজিব প্রথমে রাজি না হলেও তাকে রাজি করায় তার প্রযোজক বা স্পন্সর। বাউলদের সাথে কথা বলার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হয় তাকে। শুরু হয় রাজিবের উপস্থাপক জীবন, একই সাথে শুরু হয় ‘আজব কারখানা’ ছবির মূল গল্প।
ছবিতে রকস্টার রাজীবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তার স্ত্রীর চরিত্রে মায়মুনা ফেরদৌসি মম, গার্লফ্রেন্ডের চরিত্রে র্যাম্প মডেল শাবনাজ সাদিয়া ইমি এবং টেলিভিশন প্রযোজকের চরিত্রে দিলরুবা দোয়েল অভিনয় করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন খালিদ হাসান রুমি, মাহরিন মান্য, ক্রিস্টিয়ানো তন্ময়, অর্পণ প্রমুখ।এছাড়া নিজ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সংগীতশিল্পী তানভীর আলম সজীব, সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয়, সেলিম ও দিলু বয়াতি এবং কিতাব আলী।
‘জন্মসাথী’র পরে ‘আজব কারখানা’ পরিচালক শবনম ফেরদৌসীর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ছবিটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন এনামুল হক সোহেল। কিছু কিছু দৃশ্য চোখে লেগে থাকার মতো। সোহেলকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে।
ছবিতে পাঁচটি মৌলিক গান রয়েছে। জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজের চারটি কবিতাকে গানে রূপান্তর করা হয়েছে। ‘ফেরিওয়ালা’ কবিতার ‘কষ্ট নেবে কষ্ট’, ‘যাতায়াত’ কবিতার ‘কেউ জানে না’ এবং ‘তোমাকে চাই’ শিরোনামের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তন্ময় তানসেন। গানগুলোর সংগীতায়োজন করেছেন ব্যান্ড ভাইকিংস এবং ‘আজন্ম কাঙাল আমি’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন লাবিক কামাল গৌরব। গৌরব নিজেও এই ছবির সংগীত পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ছবিতে লালন সাঁইজি, রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, জারি ও সারি গান, নেত্রকোনার উকিল মুন্সী ও সিলেটের শাহ আবদুল করিমের গানের অংশবিশেষও ব্যবহৃত হয়েছে।
আজব কারখানাআজব কারখানা ছবিটি ২০১৬ -১৭ অর্থ বছরে সরকারি অনুদান পেয়েছিল। ছবির মূল শুটিং সম্পন্ন হয় ২০১৯-২০ সালে। ছবির শুটিং হয়েছে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়াতে। ছবিটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং পাঁচটি পুরস্কার পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এবার এই ছবির ভিন্ন কিছু দিক। এই ছবি দেখে অনেকেই দেশের একজন রকস্টারের ছায়া জীবনী ভেবে বসতে পারেন। ছবিতে পরমব্রতর চুলের স্টাইল এবং গানের অভিব্যক্তি অনেকটা সেদিকেই ইঙ্গিত করেছে। সার্বক্ষণিক মদ পান আর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে রকস্টারের রাত কাটানোর দৃশ্যগুলো ছিলো দৃষ্টিকটু। শিশু কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই ছবি দেখা ক্লান্তিকর মনে হতে পারে।
এদেশের মাটি ও মানুষের গানের কথা বলা হলেও সিলেটের হাছন রাজা, রাধা রমন, গাজী কালুর গান, যশোর নড়াইল অঞ্চলের বিজয় সরকার, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বা মাইজভাণ্ডারী গানের কোনও ছোঁয়া ছবিতে নেই। ছবির নাম নেয়া হয়েছে লালন সাঁইজির গান থেকে, যদিও তার গান ব্যবহৃত হয়েছে ছবির শেষ অংশে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদ তার ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে ‘পূবালী বাতাসে’ এবং ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গান দুটো প্রথম ব্যবহার করেছিলেন যা ‘আজব কারখানা’ ছবিতেও আছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’ ছবিতে ব্যবহৃত ‘ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু পান খাইলা না’ গানটিও এই ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
ছবির দ্বিতীয় অংশে রকস্টারের জীবনের এক ভাংচুর দেখানো হয়েছে। রক গান বাদ দিয়ে সে লোকগানের দিকে ফিরবে কিনা তার কোনও ইঙ্গিত না রেখেই শেষ করা হয়েছে এই ছবি। সরকারি অনুদানের ছবিতে ভিনদেশের অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করা হয়। সরকারি অনুদানের এই ছবিতে পরমব্রতকে কেন নেয়া হয়েছে সেই প্রশ্নও তোলা যেতে পারে।
তবে প্রচলিত গল্পের বাইরে ভিন্ন গল্প নির্মাণের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো যেতে পারে। জয় হোক বাংলা ছবির।
আহসান কবিরআহসান কবির
আজব কারখানা: ৬/১০
পরিচালক: শবনম ফেরদৌসী
মুক্তি: ১২ জুলাই ২০২৪
ব্যানার: ভার্সা মিডিয়া
সহ প্রযোজক: সামিয়া জামান
এএজি