আলো দিচ্ছে পপির ভাসমান স্কুল
বর্ষায় ‘নাও’ আর শুকনায় ‘পাও’। কিশোরগঞ্জের হাওরের মানুষের এটি প্রবাদ বাক্য ও চিরচেনা রূপ। এখানকার জনপদের মানুষ সবসময় অবহেলিত। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এক বিরাট জনগোষ্ঠীর বসবাস নিকলী উপজেলার ঘোড়াউত্রা নদীপাড়ের দুটি ইউনিয়ন ছাতিরচর ও সিংপুরে। এ দুই ইউনিয়নের অধিকাংশের পেশা কৃষি ও মৎস্যজীবী। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা এ মানুষগুলোকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পপি’ চালু করেছে ভাসমান স্কুল। অভিভাবক ও এলাকাবাসীর কাছে এসব স্কুল এখন জলে ভাসা স্কুল হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে।
২০০৯ সালের দিকে সংস্থাটি ছাতিরচর ইউনিয়নে চারটি এবং সিংপুর ইউনিয়নে তিনটি একতলা ও দ্বিতল নৌকায় ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করে। একই সঙ্গে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণসহ নানা সেবা প্রদানের দায়িত্ব নেয়। বিনামূল্যে বই-খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, জুতা, টিফিন ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে হাওরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সাতটি ভাসমান স্কুল। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মনোরঞ্জনে রয়েছে খেলাধুলার আয়োজন।
সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে এসব ভাসমান স্কুলের ক্লাস। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলে রয়েছে লাইব্রেরি ও শিক্ষণীয় ফটোগ্যালারির পাশাপাশি খেলাধুলার নানাবিধ আয়োজন। আর্থিক সংকটের কারণে একসময় অনেক পরিবারের ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মীম আক্তার জুঁই বলেছে, আমাদের গ্রামের চারপাশে নদী। এখানে একটি স্কুল থাকলেও আমাদের লেখাপড়া করার মতো যে খরচ প্রয়োজন, তা সম্ভব হয় না। ভাসমান স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকেই পড়ালেখা করে আসছি। স্কুলে যা প্রয়োজন সবই স্যাররা আমাদের দিয়ে দেন। স্কুল ড্রেস থেকে শুরু করে টিফিন পর্যন্ত সব।
‘কৃতকার্য’ সিল বানিয়ে কনস্টেবল নিয়োগের চেষ্টা, অতঃপর...
মা-বাবা হারানো শিক্ষার্থী আকাশের ভাষ্য, আমার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আর পড়াশোনা করতে পারছিলাম না। এমন সময় স্কুলের একজন ম্যাডাম আমাকে খেলার মাঠে গিয়ে পড়াশোনার কথা বললেন। আমিও পড়াশোনা করতে আগ্রহ দেখিয়েছি। এরপর আমাকে পপির ভাসমান স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সব স্যাররা দিয়েছেন। কোনো কিছু আমার কিনতে হয়নি। এখন আমি চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ সময় ম্যাডাম আমাকে ডাক না দিলে পড়ালেখা করতে পারতাম না।
শিক্ষার্থী নাবিলা আক্তার বলেন, আমাদের এখানে বন্যা হয়। বন্যার সময় অনেক স্কুল ডুবে গেলেও আমাদের স্কুল ভেসে থাকে। কখনো ক্লাস বন্ধ থাকে না। এক দিন স্কুলে না এলে স্যার অথবা ম্যাডাম আমাদের বাড়িতে যান। খোঁজখবর নেন আমরা কেন স্কুলে আসিনি। সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করেন।
কেএ