সুইজারল্যান্ডের গরুর গলায় ঘণ্টা নিয়ে বিরোধ
চলতি বছরের শুরুতে মধ্য সুইজারল্যান্ডের আরওয়ানগেন গ্রামে গরুর গলায় ঘণ্টা নিয়ে একটি বিরোধের সৃষ্টি হয়। গ্রামের একটি আবাসিক এলাকার পাশের মাঠে ১৫টি গরু সারারাত অবস্থান করত। এদের গলায় বাঁধা ঘণ্টার শব্দে রাতে ঘুমাতে পারতেন না অভিযোগকারী দুই জোড়া দম্পতি। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন যে, কৃষকদের উচিত রাতের বেলায় গরুগুলোর গলা থেকে ঘণ্টা খুলে নেওয়া।
তবে স্থানীয়দের মধ্যে গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার ঐতিহ্যের প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তারা অভিযোগকারী দম্পতির দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বলেন, গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধা সুইজারল্যান্ডের গ্রামীণ জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি সুইজারল্যান্ডের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
আরওয়ানজেনের মেয়র নিকলাউস লুন্ডসগার্ড-হ্যানসেন এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এমন অভিযোগ শুনে অবাক হয়েছিলাম। গরু যে এত বেশি শব্দ করে, এটা আমি জানতাম না। তবে জানতে পারলাম এরাও মানুষকে বিরক্ত করতে পারে।’ তবে এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে এত প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়াটা তাঁকে অবাক করেছে।
অভিযোগটি সুইজারল্যান্ডের প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে তুলে ধরতে অভিযোগের পক্ষে গ্রামের মোট বাসিন্দাদের ১০ শতাংশের সমর্থন দরকার ছিল। গ্রামের মোট ৪ হাজার ৮০০ বাসিন্দা।
উল্টো গ্রামবাসীরা ‘বেল ইনিশিয়েটিভ’-এর পক্ষে অর্থাৎ গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার পক্ষে ১ হাজার ৯৯ গ্রামবাসীর সই সংগ্রহ করেছেন। সেখানে বলা হয়, গরুর গলায় সব সময় ঘণ্টা বেঁধে রাখার অধিকার কৃষকদের আছে।
পরে গত সোমবার সন্ধ্যায় এই উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভা পরিষদে তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে আগামী জুনে ভোটাভুটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই উদ্যোগে নেতৃত্বদানকারী একজন চিকিৎসক আন্দ্রেস বাউম্যান বলেন, বৈঠকে থাকা ১৬৬ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার বিরোধিতা করেছিলেন।
আল্পইন পবর্তমালার চারণভূমিতে চরে বেড়ানো গৃহপালিত পশুদের অবস্থান জানার জন্য একসময় এই ঘণ্টা অপরিহার্য ছিল। এরপর জিপিএস ট্র্যাকার আসার পর এই ঘণ্টার প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। তারপরও এই ঘণ্টা সুইস গ্রামীণ জীবনের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে রয়ে গেছে।
গ্রীষ্মকালে আল্পাইনে জমিতে কৃষিকাজের প্রচলিত রীতির অংশ হিসেবে গবাদিপশুর পালকে উঁচু পাহাড়ের চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়া হতো। এদের গলায় বাঁধা হয় আলংকারিক ঘণ্টা। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ তালিকায় স্থান করে নেয় এটি।
এমআইপি