Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ: থানা ঘেরাওয়ের হুমকি

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ: থানা ঘেরাওয়ের হুমকি
দেশ দেশান্তর২৪.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের অভ্যন্তরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়েরের সাতদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। 

এর আগে, গত সপ্তাহের শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। ১৫ জুলাই রাতে তিনি উপাচার্যের বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছিলেন। কোন আশানুরূপ অগ্রগতি দেখতে না পেয়ে তিনি শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থানায় গিয়ে পুনরায় অভিযোগ দায়ের করেন। 

অভিযোগপত্রে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৫ জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হই। সেখানে রাতে তিনিসহ অর্ধশত শিক্ষার্থীর উপর শিক্ষক ও প্রশাসনের সরাসরি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ কর্তৃক বর্বর হামলা চালানো হয়। 

উক্ত ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক বশির আহমেদ, সাবেক প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন ভূইয়া, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ই¯্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, সহকারী রেজিস্টার (শিক্ষা) রাজিব চক্রবর্তী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাহিদুর রহমান খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্রলীগ কর্তৃক নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচারের দাবিতে ১০০—১৫০ জন শিক্ষার্থী ঐ রাতেই ভিসি বাসভবনের সামনে উপস্থিত হই। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের তৎকালীন প্রশাসনিক দায়িত্বরত এবং এই মামলার কতিপয় আসামী বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলতে আসে। সবার কথা না শুনে তাদের হলে চলে যেতে বলে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদী স্লোগান দেয়া শুরু করলে ১৬ জুলাই রাত সাড়ে ১২ টার সময় সোহেল ও লিটনের নেতৃত্বে মেহেদী ইকবাল, ই ফিল আহমেদ, রাজিব চক্রবর্তী, নাহিদুর রহমান ও সুদীপ্ত শাহীনের উপস্থিতিতে ছাত্রদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করা হয়। 

উক্ত হামলায় বাদীসহ অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং আহত হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। হামলার পূর্বমুহূর্তে উপাচার্য নূরুল আলম, প্রক্টর আলমগীর কবির, অধ্যাপক বশির আহমেদ, ফিরোজ—উল—হাসান ভিসি বাসভবনে নিরীহ শিক্ষার্থর্ীদের আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে; বাসভবনের গেইট খুলে দিতে বললেও অভ্যন্তরে প্রবেশের পরে হামলা শুরু হলে বাসভবনের ফটক খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। কার্যত তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ফাঁদে ফেলেছেন বলে বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন। 

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ আছে, এরই মধ্যে অভিযুক্তদের নেতৃত্বে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা রামদা, হকিস্টিক, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এসময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ভিসির বাসভবনে আটকা পড়ে। এসুযোগে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা উক্ত হামলায় মারাত্মক জখম ও আহত হয়। এসময় হামলাকারীরা উচ্চস্বরে বলছিলো, ‘আজকে তোদের সবাইকে শায়েস্তা করা হবে। একটাকেও এখান থেকে জীবিত ছাড়া হবে না। ’ 

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, হামলার সময় শিক্ষার্থীরা জীবন বাঁচাতে এদিক—সেদিক আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেও অজ্ঞাত ১৫০—২০০ জন সন্ত্রাসী সেখানে মুহুমুর্হু পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। কাঁচের বোতল ও পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারলে একাধিক শিক্ষার্থী কাটা, ফাটা ও জখমের স্বীকার হয়। এ হামলায় বাদীসহ অজ্ঞাত ১০—১৫ জন রক্তাক্তভাবে আহত হন। এ ঘটনা ব্যাপকতা ও হামলার সময় দীর্ঘ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং একাধিক শিক্ষার্থীকে অজ্ঞান হতে দেখা যায়। রাত সাড়ে তিনটায় বিভিন্ন হল থেকে আসা শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উক্ত অবরুদ্ধ অবস্থা ও হত্যাচেষ্টা থেকে তারা প্রাণে বাঁচেন বলে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন। 

মামলা গ্রহণ না করার ব্যাপারে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন থানায় গিয়েছি, তারা এক প্রকার গড়িমসি করছে। তারা বলছে তাদের উপর থেকে নির্দেশ আছে, হাই প্রোফাইল কারো নামে এখন মামলা নেয়া যাবে না। আমরা জিজ্ঞেস করেছি হাই প্রোফাইল কারা? এ প্রশ্নের কোন জবাব তারা দিতে পারেনি। 

মামলা গ্রহণ করার ব্যাপারে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দীক বলেন, আমরা অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছি। এখানে কিছু প্রাথমিক তদন্তের ব্যাপার আছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা— আমরা দেখবো। 

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, মামলা অবশ্যই নিতে হবে। ১৫ থেকে ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগরে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় অবিলম্বে মামলা নিতে হবে। যদি পুলিশ—প্রশাসন মনে করে এখানে কোনপ্রকার ব্যত্যয় আছে, সেটা তারা উল্লেখ করতে পারে। কিন্তু অবিলম্বে সে ব্যত্যয় সংশোধন করে দ্রুততম সময়ে মামলা নিতে হবে। 

এ ব্যাপারে জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদের মুখপাত্র ইমরান শাহরিয়ার বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা লক্ষ্য করছি সাভার—আশুলিয়া থানা প্রশাসন জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা তাদেরকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে। স্বাধীন বাংলাদেশে খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে কীসের ভয় পুলিশের? আমরা ইতঃপূর্বেও সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এ ব্যাপারে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যারা আমাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ আমরা সহ্য করব না। এরপর যদি পুলিশ প্রশাসন মামলা নিতে গড়িমসি করে, আমরা ছাত্র—জনতা মিলে থানা ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
টিএ

আরও পড়ুন