কিশোরী গৃহবধুর মরদেহ নিয়ে হাসপাতালে স্বামী
‘তোমাকে খুব ভালোবাসছিলাম, কিন্তু তোমার বাবা-মায়ের জন্য তাও পারলাম না। আমি যদি মরি তাহলে নাকি তোমার মা, বাবা, নানিরা, সবাই খুশি হবে। আর আমি নাকি তোমাদের খাবার জন্য আসছি। আমি মরে যাব, তুমি ভালো থাইকো। তোমার মা, বাবা নানিকে ভালো থাকতে বইলো। আর তোমার মায়ের কথা শুইনো, বাবা-মাকে কখনো কষ্ট দিওনা। মা-বাবার কথা মতো চইলো পাখি। আমার এই কথাগুলো রাইখো। আর আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আমার মনের অজান্তে, পারলে ক্ষমা করে দিও। ভালো থাইকো, আল্লাহ হাফেজ জানপাখি’।
কিশোরী গৃহবধূর মরদেহের বুকের ওপর পাওয়া চিরকুটে লেখা ছিল এসব কথা। ওই কিশোরীর নাম মৌমিতা আক্তার (১৬)। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ আদনান নিশ্চিত করে বলেন, ‘ওই কিশোরী গৃহবধূকে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছিল। আমরা ইসিজি করার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সেবিকা নিহতের শরীরে বুকের কাপড়ের মধ্য থেকে চিরকুট পেয়েছিল। সেখানে কি লেখা ছিল, আমি সঠিক জানি না। তবে চিরকুটটি নিহতের নিজের হাতে লেখা কিনা কিংবা কেউ লিখে তাঁর শরীরের মধ্য রেখেছেন কিনা সেটি পুলিশ তদন্ত করে দেখবেন। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ থানায় নিয়ে যান। নিহতের গলায় দাগ ছিল।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার ঝাড়ঘরিয়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দসের ছেলে সাকিব হোসেন বরিশাল জেলার ভোলা উপজেলা সদরের মহিউদ্দিনের মেয়ে মৌমিতার সঙ্গে মুঠোফোনে পরিচয়। এরপর তাঁদের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে গত পাঁচ মাস পূর্বে পরিবারের অমতে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মৌমিতা তাঁরা স্বামীর বাড়ি ঝাড়ঘরিয়াতে থাকতেন। তবে স্বামীর বাড়ির লোকজন মৌমিতাকে দেখতে পারতেন না। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মৌমিতাকে মৃত অবস্থায় আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বামী সাকিব হোসেন ও তাঁর পরিবারের লোকজন। তখন তিনি চিকিৎসককে জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়েছিল। এরপর যখন নিশ্চিত হন মারা গেছে, তখন সাকিবসহ পরিবারের লোকজন সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে দুপুরে আবার সাকিব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হন। তখন পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পড়ে থানা পুলিশ আটক স্বামীকে ছেড়ে দেন।
নিহত মৌমিতার স্বামী সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমার স্ত্রী কীভাবে মারা গেছে আমি বলতে পারি না। আমি সকাল সাড়ে ৮টায় কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলাম। আমার ছোট ভাই আমাকে খবর দিয়েছিল। আমি বাড়ি এসে দেখি ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছে মৌমিতা, দড়ি নাকি ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছিল সেটি আমি বলতে পারব না, কে কেটে দিয়েছিল সেটিও জানি না। আমি গত পাঁচ মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাস্থল বদলগাছী থানার মধ্য, সেহেতু আমরা ওই থানার একটি বার্তা পাঠিয়েছি। আমরা জিডি মুলে আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনগত যত ব্যবস্থা নেওয়ার সবকিছু বদলগাছী থানা করবে।
এএজি