Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা রবিবার, ১২ মে ২০২৪

হাতের পাঁচটা আঙুল তো সমান নয়: মমতা ব্যানার্জি

হাতের পাঁচটা আঙুল তো সমান নয়: মমতা ব্যানার্জি
সংগৃহীত ছবি

সন্দেশখালির মতো ঘটনা হতেই পারে, হাতের পাঁচটা আঙুল তো সমান নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ৮ মার্চ নারী দিবস, তার আগেই কলকাতার রাজপথে পদযাত্রায় সামিল হলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি।  মিছিলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দলীয় কর্মীদের মধ্যে উন্মাদানা ছিল চোখে পড়ার মতো।

মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে আয়োজিত এই মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ মালা রায়, দোলা সেন, সুস্মিতা দেব, সাগরিকা ঘোষ, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভলী ব্যানার্জি, অভিনেত্রী জুন মালিয়াসহ নারীরা। সন্দেশখালির নারীরাও।  

মিছিলে দ্বিতীয় সারিতে ছিলেন মমতার ভাতিজা ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি, সংসদ শান্তনু সেন, দেবাশীষ কুমার সহ পুরুষ সদস্যরা।

তবে এদিন তৃণমূলের এই মিছিলে অভিষেকের পাশেই হাঁটতে দেখা যায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুটমনি অধিকারীকে। মুকুটমনি ছিলেন রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক।  

বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয় মিছিল, বউবাজার ওয়েলিংটন, এস.এন ব্যানার্জি রোড হয়ে বিকালে সেই মিছিল শেষ হয় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে।

সম্প্রতি রাজ্যটির উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে নারীদের ওপর অত্যাচার, শ্লীলতাহানি, নারী নির্যাতনের ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে রয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই ঘটনায় সন্দেশখালিসহ রাজ্যের নারীদের একাংশ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ তৃণমূলের ওপর।

এমন এক পরিপ্রেক্ষিতে নারী ভোটারদের পাশে পেতে পশ্চিমবঙ্গে তিনটি সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনটি সভা থেকেই সন্দেশখালি ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী।

নারীরা যে বাংলায় মোটেই সুরক্ষিত নয় সে কথা তুলে ধরে নারীদের পাশে থাকার বার্তা দেন মোদি।

স্বাভাবিকভাবেই লোকসভা নির্বাচনের আগে বেশ খানিকটা ব্যাকফুটে তৃণমূল। আর সেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতেই পথে নামা তৃণমুলের।  

বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, যেকোনো নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী ভোট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ রাজ্যেও শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ ভোট রয়েছে নারীদের। স্বাভাবিকভাবেই নারীদের সমর্থন পেতে মরিয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলই।  

এদিন মিছিল শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সেই সন্দেশখালি ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‌‘সন্দেশখালি একটা জায়গার নাম। কিন্তু তা নিয়ে অনেকে ভুয়া সন্দেশ (খবর) দিয়েছেন। ’ 

মমতার অভিমত, ‘সন্দেশখালির মতো ঘটনা হতেই পারে, হাতের পাঁচটা আঙুল তো সমান নয়। কিছু কিছু জায়গায় অনেক সময় আমাদের গোচরে থাকে না। যদি কিছু অন্যায় হয়েও থাকে সঙ্গে সঙ্গে সেটা আমাদের গোচরে এলে আমরা পদক্ষেপ নিই। এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের গ্রেফতার করতে আমি কখনও কার্পণ্য বোধ করি না। কিন্তু বিজেপির কাজ একটাই, তৃণমূল কংগ্রেসকে মামলা দাও, ইডিআই, সিবিআই লাগিয়ে দাও, জেলে পুরে দাও, আর জোর করে নির্বাচনে যেত। আমি তাদের বলব, বাংলা নিয়ে এত রাগ কেন? বিজেপি যদি এমনিতেই জিতে যায় তবে বদনাম করার কি দরকার?’ 

তিনি ফের বলেন, ‘গতকালও বিজেপি নেতারা বলে গেলেন এ রাজ্যে নারীরা নাকি সব থেকে বেশি নির্যাতিত হয়। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র জায়গা যেখানে নারীরা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। ’

তার প্রশ্ন ‘,বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে নারীদের বিচার হয় না। মণিপুরে যখন সহিংসতা হচ্ছিল এবং নারীদের বিবস্ত্র করে ঘোরানো হচ্ছিল তখন বিজেপি নেতারা কোথায় ছিলেন? 

নাম না করে কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে নিশানা করেন মমতা। তিনি বলেন,‌বিচারের চেয়ারে বসে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন। তাদের থেকে তাকিয়ে কি মানুষ বিচার পাবেন? রোজ একটা করে পিআইএল (জনস্বার্থ মামলা) করছে, আর পিআইএল গেলেই বিজেপি যা বলছে তাই হচ্ছে। তাদের রায়ের ফলে রয়েল বেঙ্গলও পালিয়ে যাবে, এরা হলেন কেউকেটা। তবে আমি খুশি যে মুখোশটা খুলে পড়েছে। হাজার হাজার চাকরি খেয়ে বড় নেতা হয়ে গিয়েছিলেন, প্রতিদিন টিভিতে ইন্টারভিউ দিচ্ছে, অভিষেককে নাম করে রোজ গালাগালি দিত। আজকে আপনি কোথায় গেলেন? কাল থেকে জনগণ আপনার রায় দেবে। তৈরি থাকুন। ’

এদিনের সভা থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়েও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তারা বলবে সিএএ হবে, এরপরই হবে চিচিং ফাঁক। এনআরসির নামে আধার কার্ড বাতিল করা শুরু করেছিল, আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। আমরা এখানে আধার কার্ড করতে দেব না, এনআরসি করতে দেব না। ’ 

বিজেপিকে ওয়াশিং মেশিন, ওয়াশিং পাউডারের সঙ্গে তুলনা করে মমতা বলেন,‘তৃণমূলে থাকলে চোর, কালো, আর বিজেপিতে গেলেই সাদা। ’

মমতার হুঁশিয়ারি, ‘দিন যেমন আছে, রাতও হয়, সূর্যোদয় হলে সূর্যাস্ত হয়। আগামীকাল সূর্যাস্ত হবে, অপেক্ষা করুন। ’
টিএ