তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে তাহাজ্জুদকে। তাহাজ্জুদ হচ্ছে, মুমিনের অন্তরের প্রশান্তি। আমরা আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি তা পরিমাপের একটি মানদণ্ড হতে পারে তাহাজ্জুদ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এই ব্যক্তির আচরণ সুন্দর, নাকি সে ব্যক্তির আচরণ সুন্দর। যে অনুগত, রাতের বেলা (নামাজে) দাঁড়ায় ও সেজদা করে, আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজের রবের রহমতের আশা করে।’ সুরা আল যুমার : ৯
যারা সর্বশক্তি মান আল্লাহর সঙ্গে একান্তেদীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতে চায়, তাদের জন্য রাতের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হচ্ছে তাহাজ্জুদ। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের বেলা এমন একটি সময় আছে, যে সময় একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে উত্তম যাই চাইবে, আল্লাহ তাকে তাই দেবেন।’ সহিহ্ মুসলিম : ১৮০৭
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা সেই পুরুষের ওপর সন্তুষ্ট হন, যে রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে ও ইবাদত করে। তারপর তার স্ত্রীকে ডেকে দেয়। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙায়।’ হাদিসের অপর অংশে বলা হয়েছে, ‘সেই নারীর ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, যে রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে ও ইবাদত করে। তারপর তার স্বামীকে ডেকে দেয়। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে মুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘুম ভাঙায়।’ মুসনাদে আহমদ : ৭৪০৪
কী মনোমুগ্ধকর একটি হাদিস। তাহাজ্জুদ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও মহব্বত বৃদ্ধি করে দেয়। আল্লাহতায়ালা কাউকে ভালোবাসেন কি না, কিংবা কারও ওপর সন্তুষ্ট কি না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে, সে ব্যক্তি রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে পারছে কি না। যদি কোনো ব্যক্তি নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত থাকুন তিনি আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাবান। আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ কিছু বান্দাকেই এই তাহাজ্জুদের মাধ্যমে তার সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য দান করেন। গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোটা এমন এক সম্মান, পাপীরা যা অর্জন করার যোগ্যতা রাখে না। বিখ্যাত তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘আমার একটি পাপের কারণে আমি একটানা পাঁচ মাস তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারিনি।’ এক ব্যক্তি হজরত হাসান বসরি (রহ.)-এর কাছে এসে বলল, হে ভাই! আমার ঘুম ভালো হয়। কোনো দুশ্চিন্তা ও অসুস্থতা নেই। আমি প্রতিদিনই বিছানার পাশে পানি রেখে ঘুমাই। কিন্তু রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য উঠতে পারি না। হজরত হাসান বসরি (রহ.) তাকে বললেন, ‘তোমার পাপগুলো তোমাকে বেড়ি পরিয়ে রেখেছে। তোমার দিনের পাপ তোমাকে রাতে উঠতে দিচ্ছে না।’
আমরা সহজেই এই ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, দিনের পাপ একজন মুমিনকে রাতের সম্মানজনক তাহাজ্জুদ থেকে বঞ্চিত করে। তাই দিনের পাপ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং রাতের তাহাজ্জুদের নামাজকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করতে হবে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘তাহাজ্জুদ ও জোরে কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত করা হলো প্রথম সারির ইবাদত।’ যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য রাতে আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন জরুরি। এ জন্য আল্লাহতায়ালা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে তাহাজ্জুদের আদেশ করেছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে বস্ত্রাবৃত! কিছু সময় ছাড়া রাত জেগে থাকো। রাতের অর্ধেক অথবা এর চেয়ে একটু কম।’ সুরা মুজ্জাম্মিল : ১-৩
স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য আদেশ করেছেন, সেখানে সহজেই এর সম্মান ও মর্যাদা বোঝা যায়। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে নির্জনে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। এ কারণে হকপন্থী আলেম ও বুজুর্গরা তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের সম্মান হলো-তাহাজ্জুদ।’মুস্তাদরাক আল হাকিম : ৭৯২১
মুমিন-মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত, সব প্রকার পাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখে, রাতের তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
টিএ