Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ইবিতে র‌্যাগিং, ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

ইবিতে র‌্যাগিং, ৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
সংগৃহিত ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভাগের সিনিয়র কর্তৃক নবীন জুনিয়রদের র‌্যাগিংয়ের নামে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করানো সহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে র‌্যাগিং চলাকালে অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করে হলের অন্য শিক্ষার্থীরা। পরে ইবি থানায় সোপর্দ করা হলে গতকাল সন্ধ্যায় মামলা দিয়ে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী একজন শিক্ষার্থী বাদী হয়ে দন্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় এ মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে অভিযোগ তদন্তে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহবায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলহাজতে পাঠানো অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, শরিফুল ইসলাম লিমন, কান্ত বড়ুয়া ও ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া। এছাড়া মামলায় একই বিভাগের আরও চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, বিভাগটির একই বর্ষের জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল ও মুকুল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা তাদেরকে পর্ন তারকা সাজিয়ে অভিনয় করতে বাধ্য করা, অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো ও গাঁজার-পট টানার অভিনয় করতে বাধ্য করা সহ নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান শরীফ শেখ। পরে ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ১২ থেকে ১৩জন ওই কক্ষে যান। তারা সবাই ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। এসাইনমেন্ট এর কাজ থাকায় এদের মধ্যে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট চারজনের উপর অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, সেখানে তাদেরকে পাঁচ রকমের হাসি দেয়া, কল দিয়ে বাজে ভাষায় কথা বলা ও নাচতে বাধ্য করা হয়েছিলো। পরে হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের ইবি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাতেও নবীন ব্যাচের বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা। তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ সিনেমার তারকাদের নাম জিগ্যেস করা হয়। কাউকে পর্ণ তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয় এবং নানারকম হুমকিও দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও তারা ভুক্তভোগীদেও সিগারেট খাওয়ার অভিনয়, গাঁজা-পট টানার অভিনয়, পকের নামতা বলা ও রিলেশনশীপের উপর এসাইনমেন্ট লিখতে বাধ্য করেন। এসময় উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ।

ভুক্তভোগী তারেক হোসাইন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আসছি ১৭ দিন। তারা আমাদের ১৭ দিনে কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন করেছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ভুল না হলেও ভুল হয়েছে বলে বারবার পরিচয় দিতে বাধ্য করতো। এভাবে অনবরত পরিচয় দেওয়া, গালিগালাজ ও জোরজবরদস্তি করত। যেখানে যেই অবস্থানে থাকিনা কেন ৫ মিনিটির তাদের সামনে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হতো। না আসলে মারারও হুমকি দিতো। এছাড়া প্রকাশের অনুপযোগী বিভিন্ন কথা বলতো বলে অভিযোগ করেন তারেক। তিনি এসবের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।

আরেক ভুক্তভোগী ছাত্র রাকিব বলেন, ‘আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে মিয়া খলিফা আমার আরেক বন্ধুকে মিলে পর্ণ ভিডিও বানানোর অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া আরেক বন্ধুকে বান্ধবী মনে করে ইম্প্রেস করতে বলে। তারা সমকামিতা প্রমোট করতেছে বলে মনে হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, এই ঘটনায় আমি ওই কক্ষে ছিলাম না৷ তবে এর আগে গতদিন হাদি ও সাদী মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওইদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়। না পারলে তাদের একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এসময় কাউকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয় নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. আকতার হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইবি থানার ওসি শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ছয়জনকে থানায় নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। পরে এদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে (মঙ্গলবার) ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে একজন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে বাকী পাঁচজনকে কুষ্টিয়া কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
টিএ

নামাজের সময়সূচী

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪

আরও পড়ুন