Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

জানা-অজানা

কোথা থেকে এলো এই 'গাইবান্ধা', জানেন না অনেকেই!

কোথা থেকে এলো এই 'গাইবান্ধা', জানেন না অনেকেই!
সংগৃহীত ছবি

গাইবান্ধা নাম শুনলেই অনেকের মনেই প্রথম প্রশ্ন আসে এ জায়গায় কি প্রচুর গরু বেঁধে রাখা হয় নাকি। অনেকের মাঝেই গাইবান্ধা জেলার নামকরণ নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। গাইবান্ধা নামে যেমন রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা তেমনি এর পিছনে রয়েছে নানা জানা-অজানা ইতিহাসও। 

গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস সূত্রে প্রাপ্ত থেকে জানা যায়, ভবানীগঞ্জ ফুলসড় অঞ্চলের একটি গ্রামের নাম ছিল।পরবর্তীকালে এই গ্রামের নামে থানা পরগনা ও মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।

গাইবান্ধা নামটি খুব প্রাচীন নয়। হয়তোবা এতদাঞ্চলের কোন ব্যক্তির গাই বাঁধার বিশেষ কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোকেরা এ অঞ্চলকে গাইবান্ধা বলে ডাকতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা এ অঞ্চলের নাম হিসেবে পরিগণিত হয়। যেমন— হাতীবান্ধা, মহিষবান্ধা, বগবান্ধা এ জাতীয় আরও স্থানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, গাইবান্ধা নামকরনের সঙ্গে দুটি কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে। একটি তে বলা হয়েছে মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী দুষ্টু ডাকাত আক্রমণ থেকে বিরাট রাজার গাভী রক্ষায় নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘেষে জমিতে একটি সংগ্রহশালা স্থাপন করা হয়। এই গাভীর খাদ্য পানি সংস্থান নিশ্চিত করা হয় এবং এখানে গাভীগুলো কে বেঁধে রাখা হতো। কিংবদন্তী অনুসারে গাভী বেঁধে রাখার স্থান কে কেন্দ্র করে নামটি হয় গাভী বাধা পরবর্তীকালে কথ্য ভাষা অনুসারে শব্দটি হয়ে যায় গাইবান্ধা। কারণ গাই শব্দের অর্থ গাভী আর বান্দা শব্দের অর্থ বাধা স্থানীয় ভাষায় প্রচলিত গাইবানদা শব্দের সমন্বয়ে শব্দটি যায় গাইবান্ধা নামকরণ হয়।

অপর কিংবদন্তি গোয়াল ঘর বা গোশালা কে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয়েছে।গাইবান্ধা নামকরনের আরেকটি তথ্য সূত্র হল উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু স্থানের নাম জীবন নামের শেষে বান্দা শব্দটির যুক্ত হয়ে প্রচলিত হয়েছে। সে দিক থেকে কিছু কিছু স্থানের নাম হয়েছে হাতীবান্ধা চ্যাংড়াবান্ধা ইত্যাদি কেউ কেউ মনে করেন স্থানের নাম হিসেবে গাইবান্ধাসহ ঠিক অনুরূপ নামের শেষে বান্দা শব্দ যুক্ত হয়ে উদ্ভব হয়েছে। তবে ধারণা করা হয় গাইবান্ধা নামটি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালে সৃষ্টি ইতিহাসের সূত্র অনুযায়ী গাইবান্ধা পূর্বে ভবানীগঞ্জ মহাকুমার অন্তর্গত পাতিলাদহ পরগনার একটি এলাকা ছিল। আর বর্তমান গাইবান্ধা শহর এলাকা তদানীন্তন পাতিলাদহ পরগনার পশ্চিমাংশ যা বাহার বন্দ পরগণা নামে অভিহিত-সেখানে অবস্থিত।

প্রতিটি প্রশাসনিক এলাকার সীমানা নির্ধারিত থাকে। গাইবান্ধা জেলার সীমানা রয়েছে এর উত্তরে তিস্তা নদী, উত্তর পশ্চিমে রংপুর জেলার পীরগাছা এবং পশ্চিমে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর পীরগাছা উপজেলা রয়েছে। পশ্চিম সীমানায় আরো রয়েছে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা আবার পশ্চিম-দক্ষিণ জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলা এবং দক্ষিনে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ ও সোনাতলা উপজেলা। এর পূর্ব দিকে বহমান ব্রহ্মপুত্র নদ।

১৮৭৫ সালের পূর্বে গাইবান্ধা নামে এতদাঞ্চলে তৎকালীন সরকারের কোন ইউনিট ছিল না। তবে, রংপুর জেলায় সাদুল্লাপুর ও ভবানীগঞ্জ থানা নিয়ে ১৮৫৮ সালের ২৭ আগষ্ট ভবানীগঞ্জ নামে একটি মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে ভবানীগঞ্জ মহকুমা নদীভাঙ্গনের কবলে পড়লে মহকুমা সদর ঘাঘট নদীর তীরবর্তী গাইবান্ধা নামক স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে এর নাম পরিবর্তন করে গাইবান্ধা মহকুমা নামকরণ করা হয়। আশির দশকে মহকুমাগুলোকে জেলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা জেলা। বর্তমানে পৌরসভা রয়েছে চারটি ও ইউনিয়ন ৮১টি। জনসংখ্যা রয়েছে ২৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন, মৌজা ১০৯২টি, গ্রাম ১৩৯২টি, রেলপথ ৫৬ কিলোমিটার ও মহাসড়ক রয়েছে ৩২.৮ কিলোমিটার। 

গাইবান্ধা নিয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা শহরের পশ্চিমপাড়া বাসিন্দা প্রবীন ব্যক্তি চন্দন সাহা (৭৫) বলেন, আমার জন্ম গাইবান্ধার কামারপাড়ায়। তবে ছোট থেকেই বাবার চাকরির সুবাদে গাইবান্ধা থাকা। গাইবান্ধা আমাদের এক শান্তির নাম। অনেকে আমাদের রংপুর অঞ্চলের মানুষকে মজা করে মোফিজ বলে কিন্তু আমরা হয়তো অতি সহজ সরল হওয়ায় অনেকে এমন বলে। আমাদের এলাকার মানুষ প্রচুর অতিথি পরায়ণ। আমরা মানুষ পেলে অনেক বেশি খুশি হই। 

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলায় দাদা ও বাবাসহ শিক্ষকের কাছে গাইবান্ধা নামকরণের গল্প শুনেছি। যতদূর মনে পড়ে, গোবিন্দগঞ্জের বর্তমান রাজা বিরাট এলাকায় রাজা বিরাটের রাজত্ব ছিল। তার শাসনকৃত এলাকার মধ্যে বর্তমান গাইবান্ধা শহরসহ আশপাশ বড় নদীর পাদদেশে হওয়ায় এলাকাটি নিচু ছিল। ফলে এ জায়গাগুলোতে জলাবদ্ধতা থাকতো। নিচু থাকায় এখানে প্রচুর গাছ-গাছালি ও ঘাস জন্মাতো। ফলে এই এলাকায় রাজা বিরাটের বিশাল গোশালা স্থাপন করা হয়। এখান থেকে প্রচুর দুধ উৎপাদন হতো। সেই দুধ থেকে বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরি করা হতো। সেসময় এই এলাকার একটা নাম রাখার দরকার ছিল। সেই গোশালা থেকে নাম রাখা হয় গাই বাঁধা। কালক্রমে তা গাইবান্ধা নামে সুপরিচিতি লাভ করে বলে শুনেছি সেসময়ের প্রবীণদের কাছে। 
টিএ