বিশ্ব বই দিবসে বইয়ের কথা
আলো যেমন পৃথিবীর অন্ধকার দূর করে তেমনি বই আমাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞান সঞ্চার করে। বইকে একজন লেখকের মস্তিষ্কসুত বলা যেতে পারে। একজন লেখক তার মনের ভাবনা ফুটিয়ে তুলে বাক্যের পর বাক্য যোজনা করে। আর সেই বই ভালো না মন্দ তা একমাএ বইটির পাঠক ই বুঝতে পারে।
ভালো বই আর মন্দ বই বিচার করতে হলে অবশ্যই একজন ভালো পাঠক হতে হবে। আমার মনে হয় মানুষের আত্মার যদি পেট থাকতো তাহলে বই ই খেতে চাইতো। বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত ও পরিশুদ্ধ করে।
আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে অন্যের পরামর্শে ২২ টি বই পড়েছি। আর সব মিলিয়ে অর্ধশত বই পড়েছি। অনেকের কাছে সংখ্যাগুলো কম মনে হবে। তবে আমার মতো অলসের কাছে এগুলো অনেক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জায়গা থেকে আমি নাট্যবিদ্যার শিক্ষার্থী। তাই আমার পছন্দের শীর্ষে সবসময়ই নাটকের বই। তার পাশাপাশি অন্যান্য বই ও কম বেশি পড়তে চেষ্টা করি।
আমার প্রিয় বই এর তালিকায় সদ্য যুক্ত হয়েছে রাহুল সাংকৃত্যায়নের "ভোলগা থেকে গঙ্গা"। এই বইটি পড়ার কথা বলেছিলেন আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড. কামালউদ্দিন কবির। বইটি পড়ার পর মনে হচ্ছে ভাগ্যিশ স্যার বলেছিলেন, নাহয় বইটির রস আস্বাদনের থেকে আরো অনেকদিন দূরে থাকতে হতো। এটি মূলত রাহুল সাংকৃত্যায়নের বেশ কিছু ছোট গল্পের সংকলন।রাহুল সাংকৃত্যায়ন এ গ্রন্থের প্রতিটি কাহিনিই ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে রচনা করেছেন। প্রথম কয়েকটি কাহিনিতে বাস্তব তথ্য-প্রমাণের কিছু অপ্রতুলতা রয়েছে, যেহেতু এর কাল প্রাগৈতিহাসিক। নিশা, দিবা, অমৃতাশ্ব, পুরুহুত প্রভৃতি রচনা লইস মর্গানের 'এনসিয়েন্ট সোসাইটি', অ্যাঙ্গেলসের 'পরিবার', 'ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি', রবার্ট ব্রিফলের 'দি মাদার্স' প্রভৃতি গ্রন্থে প্রচারিত সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে রচিত বলে জানা যায়।
প্রায় ছয় হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ কালে ভারতের সুদূর উত্তর পশ্চিমে দক্ষিণ-বাহিনী ভোলগার তীরে অরন্য-তুষার সমাচ্ছন্ন পরিবেশে যে মানবগোষ্ঠীর পদপাত শোনা গিয়েছিল তাদেরই আবাস, জীবন,প্রেম,ভালোবাসা নিয়ে এই গ্রন্থের প্রথম দৃশ্যপট উত্তলিত হয়েছে। এভাবে ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে কাহিনীর পর কাহিনীতে বিংশ শতাব্দীতে পৌছে গ্রন্থটি সমাপ্ত হয়েছে। বইটি মূলত লেখা হয়েছিল হিন্দি ভাষায়। বাংলা অনুবাদটি বেশ পুরোনো হওয়ায় কিছু অপ্রচলিত বাংলা শব্দের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি।
সত্য বলতে আমার পড়া বইগুলোর মধ্যে সুন্দর এবং দারুণ একটি বই "ভোলগা থেকে গঙ্গা"। বইটি অবশ্যই ভালো বই। এটি পাঠক সমাজে সুপাঠ্য ও বটে। বইটি না পড়লে হয়তো এত এত নতুন শব্দ জানা হতো না। এটি আধুনিক ভারতীয় সাহিত্যের আকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যে কোনো মনযোগী পাঠক বইটি পড়ে সহজেই উপলব্ধি করবেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভোলগা তট থেকে শুরু করে অতীতের ভারতীয় জনজীবনে অবিচ্ছিন্ন ধারায় প্রবাহিত মানবসভ্যতার ক্রমোত্তরনের কথা।
বিশ্ব বই দিবসে আমার প্রিয় বই "ভোলগা থেকে গঙ্গা" এর লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়নকে জানাই অপরিসীম শ্রদ্ধা।
লেখক: স্পর্শ বনিক
শিক্ষার্থী, নাট্যকলা বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
কেএ