সাবেক উপাচার্য সৌমিত্রর শয়নকক্ষে মিললো গুচ্ছের OMR ও এমপির সুপারিশ

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলোর দোতলায় একটি কক্ষ সিলগালা। এটি উপাচার্যের শয়নকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ভেতরে দুটি আলমারিও সিলগালা। আলমারির তালা খুলে ভেতরে ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর শিট পাওয়া যায়। সেখানে ছাত্র ভর্তির সুপারিশ করে উপাচার্য বরাবর ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজীম উদ্দিন আহমেদের দেওয়া ডিও লেটার ছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ডিও দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি ডিও দিয়েছেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ। তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি চিঠি দেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন মাদানী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সুপারিশ করা পৃথক দুটি ভর্তির আবেদনপত্রও দেখা মিলেছে।

জব্দকৃত নথিপত্রের তালিকায় আরও রয়েছে রয়েছে- মার্কেটিং ও দর্শন বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ খাতা, তদন্ত প্রতিবেদন, ড্রাইভার নিয়োগ, জিএসটি প্রবেশপত্র, প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগ, ফোকলোর ও সমাজকর্ম নিয়োগ খাতা, মার্কেটিং বিভাগের অফিস সহায়ক নিয়োগ খাতা, বাস হেলপার নিয়োগ খাতা, প্রকল্প বিল ভাউচার, ট্রেজারার নিয়োগ ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।

রোববার (৩ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি দুখু মিয়া বাংলোতে তল্লাশি করে উদ্ধারকৃত যাবতীয় জিনিস প্রশাসনকে হস্তান্তর করে। পরে তদন্তের স্বার্থে উপাচার্যের অনুমতিক্রমে প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (আইন) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যাবতীয় মালামাল গ্রহণ করেন। এসময় সহকারী রেজিস্ট্রার (এস্টেট) এস এম হুমায়ুন কবীর, সহকারী রেজিস্ট্রার (সিকিউরিটি) মো. রামিম আল করিম, ভিসি দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদুল হোসেনসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর অতীতে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা ও অনিয়মের তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য 'সত্যানুসন্ধান কমিটি' গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. আশরাফুল আলম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটিকে আগামী ৬০ (ষাট) কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১৪ আগস্ট উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর বাংলোতে থাকা মালামাল নিতে তাঁর স্ত্রী এলে বাধা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তখন থেকে বাংলোটি ওই অবস্থায়ই রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৭ অক্টোবর বাংলোটি সিলগালা করে প্রশাসন। বর্তমানে অবৈধ সম্পত্তি, নিয়োগে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে সৌমিত্র শেখরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ১৮ সেপ্টেম্বর এসব অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২১ অক্টোবর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

দুদকের তথ্যানুযায়ী, অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি/সম্পদের তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। 

এসম্পর্কে জানতে প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরকে একাধিকবার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এসম্পর্কে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা ও অনিয়মের তথ্যানুসন্ধান করার জন্য একটি সত্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 
এএজি