জবি শিক্ষককে গুলি করে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর জাহিদুল হককে হত্যার হুমকিদাতা ও তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদী মানববন্ধন, চিত্রাঙ্কণ কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় হুমকিদাতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কার ও সন্ত্রাস বিরোধী বিশ্বজিৎ ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানান তারা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে মানববন্ধন করেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্যাসিস্টদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিস্টদের ঠিকানা, জগন্নাথে হবে না’, ‘এক জাহিদ মরে গেলে লক্ষ জাহিদ ঘরে ঘরে’ সহ নানা স্লোগান দেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা কয়েকটি দাবি পেশ করেন। দাবীসমূহ হলো:
২৪ ঘন্টার মধ্যে শিক্ষককে (জাহিদুল হক জিহাদ) প্রাণনাশের হুমকিদাতা অভিযুক্তদের বহিষ্কার করতে হবে। আওয়ামী স্বৈরাচার সন্ত্রাসী কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ঠাই নাই তার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা না হয় সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হবে। জগন্নাথের শিক্ষক সমিতির এই নীরবতা কেন? কেন প্রশাসন তার জবাব দিতে হবে।
শিক্ষকদের এই নীরবতা খুবই লজ্জাজনক কেন তারা এই ফেসিস্ট সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করাতে চায়? তার জবাব দিতে হবে এবং বিগত ১৫ বছরে লুটপাট, চাঁদাবাজি, জুলুম,নির্যাতন ও বিভিন্ন কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ছিল প্রশাসনের কর্মচারী -কর্মকর্তারা তাদের সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে,সেই সাথে বহিষ্কারের দাবি জানাই। সন্ত্রাস বিরোধী বিশ্বজিৎ ভাস্কর্য দিতে হবে।
এসময় প্রিন্ট মেকিং বিভাগের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ বলেন, আমাদের স্নেহভাজন জাহিদুল হককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরও। আমরা ব্যথিত বোধ করছি, এজন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। এ হুমকিতে আমরা ভয়ে গুটিয়ে যাইনি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। এভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেবে, এটা কি মগের মুল্লুক? আমাদের শুধু অনুষদের পক্ষ থেকেই নয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দাঁড়াতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে সমস্ত কিছুতে বিজয়ী হতে পারব।
ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন সুমন বলেন, আমাদের যে কলিগের ওপরে হত্যার হুমক্কি এসেছে, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন জাতীয় অংশীজন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে তার চিন্তা সবসময় ছিল। আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীদের পক্ষেও তার শক্ত ভূমিকা ছিল। এখন যখন ওই আন্দোলনের স্পিরিটের বিরোধীরা বহাল তবিয়তে আছে, এই বিষয়ে তার আপত্তি আছে। সে এগুলো নিয়ে বলছে। এজন্য জাহিদ এখন পলিটিকাল টার্গেটে পরিণত হয়েছে। জাহিদের মতো শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষককে আমরা হারাতে চাই না।
চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান ও ডিন আলপ্তগীন তুষার বলেন, আজ আমরা ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষকরা সম্মিলিত হয়েছি শিক্ষক মোহাম্মদ জাহিদুল হককে হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িত সব দুর্বৃত্তের বহিষ্কারের দাবিতে। উনিও শিক্ষক আমিও শিক্ষক। আজ জাহিদকে হুমকি দিয়েছে, কাল আমাকে দেবে। আমি বলে দিতে চাই বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা, পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা আর শিল্পী সমাজ ছুলে পুরো জয় বাংলা হয়ে যাবেন। জাহিদকে একা ভেবে ভুল করবেন না, আমরা পুরো শিল্পী সমাজ আছি তার সাথে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার হত্যার হুমকির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন এই শিক্ষক। পাশাপাশি কোতোয়ালি থানায়ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
টিএ