Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইসরায়েল যেভাবে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ ঘটালো

ইসরায়েল যেভাবে লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ ঘটালো
ছবি: সংগৃহীত

লেবাননের কয়েক হাজার পেজারের একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঘটেছে। এতে সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সদস্যসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় তিন হাজার। নজিরবিহীন এ বিস্ফোরণের ঘটনায় লেবানন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ি করেছে। হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে।

এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, প্রাণঘাতী পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালিয়ে নেওয়ার দৃঢ়তাই কেবল বাড়াবে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় এ বিষয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর। তবে এই বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

লেবাননের বলেছে, পেজারগুলো তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির। এ কোম্পানি থেকে পাঁচ হাজার পেজার কেনার অনুমতি দিয়েছিল হিজবুল্লাহ। চলতি বছরের শুরুর দিকে এই পেজারের চালানটি লেবাননে পৌঁছায়।

তবে গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানির প্রধান হসু চিং-কুয়াং বলেছেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজে ব্যবহৃত পেজারগুলো তার কোম্পানি থেকে উৎপাদিত নয়। এগুলো তৈরি করেছে ইউরোপের একটি প্রতিষ্ঠান। এটিতে তাইপেভিত্তিক গোল্ড অ্যাপোলোর ব্র্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি ছিল।

সূত্র বলেছে, উৎপাদন পর্যায়েই পেজারগুলোয় পরিবর্তন এনেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। যন্ত্রের (পেজার) ভেতরে বোর্ড ঢুকিয়ে দিয়েছিল মোসাদ। এই বোর্ডে বিস্ফোরক উপাদান ছিল। এর সাংকেতিক ভাষা গ্রহণের ক্ষমতা ছিল। যে কোনো ভাবেই হোক, এটি শনাক্ত করা খুব কঠিন। এমনকি কোনো স্ক্যানার দিয়েও শনাক্ত করা যায় না।

যে তিন হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে, সেগুলোতে বিস্ফোরণের আগেই সাংকেতিক বার্তা পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে বিস্ফোরকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই সময় এসব পেজারে বিস্ফোরক বসানোর জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল মোসাদ।

পেজার বোমা: বাস্তবতা নাকি ষড়যন্ত্র? পেজার হলো একটি তারহীন যোগাযোগের মাধ্যম, যা নব্বইয়ের দশকে মোবাইল ফোনের প্রচলনের ফলে জনপ্রিয়তা হারায়। পেজারগুলো শুধু টেক্সট বার্তা দেখাতে পারে, তবে ভয়েস কল করতে পারে না। ইসরায়েলের ট্র্যাকিং এড়ানোর জন্য হিজবুল্লাহ এই ধরনের পেজার ব্যবহার করে থাকে।

মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে যে পেজারগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে বিস্ফোরক বসানো হয়েছিল তাইওয়ান থেকে, এমনটাই জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাইওয়ানের কোম্পানি গোল্ড অ্যাপোলোকে পেজারগুলোর অর্ডার দিয়েছিল, কিন্তু পেজারগুলো ইসরায়েলি এজেন্টদের দ্বারা নাশকতার শিকার হয়েছিল বলে মার্কিন পত্রিকাটি জানিয়েছে।

প্রায় তিন হাজার পেজারের একটি চালানে গোল্ড অ্যাপোলোর এআর-৯২৪ মডেল অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইসরায়েলি গোয়েন্দারা পেজারগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশ করে বিস্ফোরক যুক্ত করে, যা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব হয় বলে এএফপি এক ব্রাসেলসভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের বরাতে জানা গেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মোসাদ কয়েক মাস ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করছিলো এবং তাইওয়ানে তৈরি পেজারগুলোতে প্রায় ৩ গ্রাম বিস্ফোরক যুক্ত করা হয়েছিলো, যা হিজবুল্লাহর নজর এড়ায়। পরে একটি কোডওয়ার্ড পাঠিয়ে প্রায় ৩ হাজার পেজারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ইসরায়েলকে দায়ী করার কারণ:

মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দক্ষিণ লেবানন সীমান্ত এলাকা থেকে উত্তর ইসরায়েলের সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দাদের নিরাপদে ফেরানো তাদের যুদ্ধের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি। এর কয়েক ঘণ্টা পর লেবাননে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, যা এর আগে বিদেশের মাটিতে উচ্চপর্যায়ের নাশকতামূলক আক্রমণের জন্য পরিচিত, এবারও তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইসরায়েল এমন গোপন অভিযানের দায় স্বীকার করে না।

এর আগে ইরানে হামাসের শীর্ষ কমান্ডার ইসমাইল হানিয়েহ হত্যাকাণ্ডে মোসাদের জড়িত থাকার দাবি ওঠে। উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত ভিআইপি এলাকায় ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে তার মৃত্যু ঘটে। ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে ১১ জন ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে মোসাদের ‘অপারেশন রথ অব গড’ পরিচালিত হয়েছিল। সেসময়ে টেলিফোন বোমা দিয়ে পিএলও’র শীর্ষ নেতাদের হত্যার ঘটনা ঘটে।

মোবাইল ফোনের বিস্ফোরণেও মোসাদের অভিযানের কথা উঠে আসে, যেমন ১৯৯৬ সালে হামাসের এক বোমা বিশেষজ্ঞের মৃত্যু ঘটে তার মোবাইলে কল আসার পর সেটি বিস্ফোরিত হলে।

ফিলিস্তিনিদের ও তাদের মিত্রদের ওপর টেলিফোন, মোবাইল ফোন ও এখন পেজার ব্যবহার করে আক্রমণ চালানোর এই ঘটনাগুলো প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে একটি ধারাবাহিক চক্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

 
এএজি

নামাজের সময়সূচী

শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪