Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

ছোটগল্প

রোড টু কোলকাতা

রোড টু কোলকাতা

দুবাই থেকে বন্ধুবর সুচিন্ত্য র একটি ম্যাসেজ পেলাম। ও লিখেছে, 'কোলকাতা আসলি, আমাকে একটু আগে থেকে বলবি না, আমিও থাকতাম। মধ্যমগ্রামে আমার বাসা খালি পড়ে আছে। সেখানেই থাকতে পারতিস। তা, কোথায় উঠেছিস?'

আমি বললাম, নিউ মার্কেটের কাছাকাছি একটি হোটেলে উঠেছি। মাত্র দুইদিনের জন্য এসেছি। ট্রেনে কোলকাতা আসার একটি সখ ছিল। সেই সখটা পূরণ করলাম।

সুচিন্ত্য আবার লিখল -- 'মাত্র দুইদিনে কোলকাতায় কী দেখবি? '

আমি বললাম -- কিছুই দেখব না। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে আমরা দুজন একটি সেল্ফি তুলব। গঙ্গার ধারে যাওয়ারও ইচ্ছা আছে। সন্ধ্যায় কালীঘাটে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে নাকি গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। প্রদীপজ্বলা সেই সন্ধ্যার মনোরম দৃশ্যটি দেখারও ইচ্ছা আছে। আর ঠিক দুপুরবেলায় একদিন গড়ের মাঠে যেয়ে সবুজ ঘাসের উপরে বসে দুজন গপ্পো করব । 

আরও লিখলাম -- নিউ মার্কেটের সামনে ফুটপাত থেকে হ্যাপি গোলগাপ্পা, বেলপুরি, আর দোসা খাবে। আর আমার মহিষের দুধের এক গ্লাস মাঠা খাওয়ার ইচ্ছা আছে। আর মেট্রোতে টালিগঞ্জ যেয়ে দুজন আইসক্রিম খাব।

সুুচিন্ত্য লিখল -- পার্ক স্ট্রীটে পার্ক হোটেলের পাশে মমো পাওয়া যায়। হ্যাপিকে নিয়ে ওখান থেকে মমো খেয়ে নিস। খুব ভাল লাগবে। 

আরেক ফেসবুক বান্ধবী শ্রাবণী বিশ্বাস সাজেস্ট করল, কোলকাতায় যখন এসেছেন, কফি হাউসে যাবেন আর ইকো পার্কটাও দেখে নিবেন।

ঘটনাটি ছিল কাকতালীয় :

এবারই দেখলাম, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের নাম বদলিয়ে রাখা হয়েছে মহানায়ক উত্তম কুমার। একদিন সন্ধ্যায় মেট্রোতে ফিরছিলাম এই উত্তম কুমার স্টেশন থেকে। ফেরাটা ছিল অফ্ আওয়ারে। অতো ভীড় ছিলনা। আমি আর হ্যাপি একটি খালি বেঞ্চে বসে পড়ি। আমাদের পাশের বেঞ্চে বসা ছিল একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলা সাথে পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একজন তরুণ। মহিলার হাতে একটি ক্রাচ। হয়ত ওনার পায়ে সমস্যা আছে। ক্রাচে ভর করে হাঁটতে হয়। ওনারা উঠেছিল গীতাঞ্জলি থেকে।

আমি বারবার ঘুরে ফিরে দেখছিলাম এই মহিলাকে। মহিলাও দেখছিল আমাকে। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিল এই মুখ। কপালে পড়েছে তার বলিরেখা। চোখের পাতায় নেই সেই ঔজ্জ্বল্য। কিন্তু তার চোখের দিকে চেয়ে দেখছি, এই চোখ আমি কোথায় যেন দেখেছি। হ্যাপি আমাকে বলছিল -- তুমি ওনাকে যেভাবে দেখছ, মনে হচ্ছে উনি তোমার পরিচিত। '

আমি মনে মনে মিলাচ্ছিলাম, এই মুখটির সাথে অনেক বছর আগে দেখা একটি মুখের সাথে। মন বলছিল হয়ত সেই হবে।

সে ছিল কীর্তিকা পোখরেল। একটি নেপালি মেয়ে। কীর্তিকা এসেছিল নেপাল থেকে স্কলারশীপ নিয়ে ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ও আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। কিন্তু ওতো অনেক আগে ওদের দেশে জন যুদ্ধে মারা গেছে। কীর্তিকাকে নিয়ে আমার একটি স্মৃতিচারণমুলক গল্পকথাও আছে। ওর তো এখানে এই কোলকাতায় থাকার কথা নয়। মন খুব আনচান করছিল ওনার সাথে একটু কথা বলবার। কিন্তু দ্বিধা করছিলাম। হ্যাপিকে বলছিলাম, 'তুমি যেয়ে ওর সাথে একটু কথা বলো। '

কথা বলব বলব করে মেট্রো ট্রেনটি কখন রবীন্দ্রসদন চলে এসেছিল বুঝতে পারিনি। ওনাদের মুভমেন্ট দেখে মনে হলো, সামনের কোনো স্টেশনে হয়ত নেমে যাবে। কেমন যেন অস্থির লাগছিল মনটা। কিছু বলব ভাবতে ভাবতেই ময়দান স্টেশনটি চলে আসে। এখানে তারা নামল না। কিন্তু পরের স্টেশন পার্ক স্ট্রীটে নামবার জন্য তারা প্রস্তুতি নেয়।

মহিলা নামবার জন্য আস্তে করে একহাতে ক্রাচে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আমি হ্যাপিকে বলি -- চলো, ওনার সাথে একটু কথা বলি। আমি কাছে যেয়ে বলি --- 'এক্সকিউজ মী, আপনেরা কোথা থেকে এসেছেন?'

মহিলা : কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে।

আমি : আপনার নাম কি?

মহিলা : কীর্তিকা পোখরেল।

আমার আত্মার স্পন্দন ধ্বনি মুহূর্তে থেমে গেল। আমি তার দুচোখের দিকে মায়া ভরে তাকিয়ে বলছিলাম --- 'তুমি কী বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে গিয়েছিলে কখনও ? '

মেট্রো ট্রেনের এ্যানাউন্সমেন্ট বক্স থেকে বলছিল তখন, ' দিস ইজ স্টেশন পার্ক স্ট্রীট '।

কীর্তিকা আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আর সুযোগ পায়নি। ক্রাচে ভর করে সেই ছেলেটির হাত ধরে দ্রুত সে নেমে চলে যায়।

মেট্রো ট্রেনটি তারপর শোঁ-শোঁ করে এসপ্লানেডের দিকে ছুটতে থাকে। ভাবছিলাম -- কী আফসোস তুমি রেখে গেলে কীর্তিকা! এত বছর পরে সুযোগ পেয়েও জানতে পারলাম না তোমার কথা। পরক্ষণেই ভাবছিলাম, এই পৃথিবীতে কাকতালীয় কতো কিছুই না ঘটে। সেই রকমই কিছু হবে এই ঘটনাটি। কিংবা কোনো ঘোর। কীর্তিকা পোখরেল আসলে বেঁচে নেই।
এমআইপি

নামাজের সময়সূচী

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪