কোটা পদ্ধতির বৈষম্য জাতীয় স্বার্থের প্রতিবন্ধকতা
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ নিয়েই এ দেশের তরুণদের মাঝে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতী-নাতনী, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য কোটা। তখন দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন হয় ব্যাপকভাবে যার ফলশ্রুতিতে সরকার সেই সুবিধা বাতিল করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল নিয়ে কিছু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। এবং আদালত এই সিদ্ধান্ত কে যথাযথ রায় ঘোষণা করেন এ থেকে পরিষ্কার ভাবে বুঝা যাচ্ছে পূর্বের মতো এদেশে কোটা ব্যবস্থা চালু হবে।
কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে। দেশের স্বাধীনতায় এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য। মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু চাকরি কেন, সব ক্ষেত্রেই তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। বর্তমান সরকার এটি পালন ও করছে । কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতবছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা সুবিধা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে দেশের চাকরিপ্রার্থী তরুণ-তরুণীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এতে যোগ্য প্রার্থীরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও যেমন প্রবেশ করতে পারছে না চাকুরিতে এবং সরকার ও তার গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ যোগ্য প্রার্থীদের। বছরের পর বছর যদি এভাবে যোগ্য জায়গায় অযোগ্য ব্যক্তিরা কোটা সুবিধা নিয়ে প্রবেশ করে এতে দেশের ও দেশের জনগণের ক্ষতি।
এছাড়া এদেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভাব নেই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায়, এখনও দেশে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ৫০০। এরকম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতি-নাতনীরা যদি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে চাকুরিতে অনুপ্রবেশ করে তাহলে দেশের প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন কিভাবে হবে বা জাতিই বা কতোটুকু লাভবান হবে?
কোনও দেশেই স্থায়ীভাবে কোটা ব্যবস্থা রাখা হয় না। আর পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কোটা অসাংবিধানিক। পঞ্চাশ শতাংশের নিচে থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অনেক ভাবে সুবিধা দেওয়া যেতে পারে কিন্তু চাকুরিতে ৩০ শতাংশ কোটা রেখে সুবিধা দেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এতে দেশের অনন্য চাকুরি প্রত্যাশীরা বৈষম্যের স্বীকার। ৫৬% কোটা এবং ৪৬% মেধা এটা কখনো সমান বিভাজন হতে পারে না। দেশের জন্য জীবন ত্যগ করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সংরক্ষণের দরকার আছে। তবে এটা কখনো মেধাকে উপেক্ষা করে নয়। মেধা উপেক্ষিত হলে তা রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হয়। মেধা প্রাধান্য না দিয়ে কোটা ব্যবস্থাকে প্রাধান্যকে দিলে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়বে। এবং এতে দেশের তরুণদের মাঝে মেধাবী হওয়ার স্পৃহা কমে আসবে যেটা দেশ এবং জাতিসত্তার জন্য ভয়ংকর। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা থাক সেটা যৌক্তিক পর্যায়ে কিন্তু ৩০ শতাংশ কখনোই কাম্য হয়।
লেখক: আজহারুল ইসলাম শুভ্র শিক্ষার্থী, পরিসংখ্যান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
আত্মকথা ও মতামত উভয়ই লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত । লেখকের মতামতের সাথে দেশদেশান্তর২৪.কম এর কোন সম্পৃক্ততা নেই।
কেএ