আক্কেলপুর এসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মাসিক চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিনের বিরুদ্ধে ফের ঘুষ বাণিজ্য ও ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে নির্দিষ্ট অংকের মাসিক চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশকে নিয়মিত মাসিক চাঁদা না দিলে ভাঙারির ব্যাবসা বন্ধ করে দেবেন বলে তিনি দোকান মালিকদের হুমকি দিয়েছেন। এছাড়াও ভয়ভীতি দেখিয়ে ও থানায় আটক রেখে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আমিনুল ইসলাম থানায় যোগদানের পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। গত জুলাই মাসে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। সেই সময় কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় ‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে এসআই প্রত্যাহার’ শিরোনামে সংবাদও প্রকাশ হয়েছিল। তার কয়েকদিন পড়েই এসআই আমিনুল ইসলাম আবারও আক্কেলপুর থানায় যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি ঘুষ বাণিজ্যে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন।
ভুক্তোভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের উপর শিয়ালা গ্রামের এক কিশোর-কিশোরী প্রেমের টানে উধাও হন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ পৃথকভাবে থানায় দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয় । পরদিন ৯ নভেম্বর এসআই আমিনুল ইসলাম উপশিয়ালা গ্রামে ওই কিশোরের বাড়িতে যান। এসআই আমিনুল ইসলাম কিশোরের বাবা আব্দুর রশিদকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর কাছে বিশ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরদিন তিনি এসআই আমিনুল ইসলামকে দশ হাজার টাকা ঘুষ দেন। একই ঘটনায় গত ১২ নভেম্বর এসআই আমিনুল ইসলাম ওই কিশোরের মা- বাবাকে থানায় ডেকে পাঠান। তাঁরা থানায় আসলে তাঁদের নারী ও শিশু হেল্প ডেক্স কক্ষে দুপুর থেকে প্রায় নয় ঘন্টা আটকে রাখা হয় দেন-দরবারের পর দশ হাজার টাকার ঘুষের বিনিময়ে ওইদিন রাত দশটার দিকে তাঁরা থানা থেকে ছাড়া পান। এসময় তাঁদের কাছে নিখোঁজ ছেলে-মেয়ে বের করে দেওয়ার জন্য লিখিত নেওয়া হয়। ছেড়ে দেওয়ার একদিন পরেই আবার দোকান থেকে ছেলের বড় ভাইকে আটক করে থানায় আনে এসআই আমিনুল ইসলাম,পরে তাকে আদালতে পাঠিয়ে দেন।
অপরদিকে উপজেলার তিলকপুর বাজারে একাধিক ভাঙারির দোকান রয়েছে। অতি সম্প্রতি এসআই আমিনুল ইসলাম ওই বাজারের প্রতিটি ভাঙারির দোকানে গিয়ে মালিকদের ভয় দেখিয়ে মাসিক চুক্তিতে চাঁদা দাবি করেন। ৩-৪ জন ভাঙারির দোকান মালিক জানান, এসআই আমিনুল ইসলাম আমাদের দোকানে এসেছিলেন। তিনি আমাদের কাছে থানায় নিয়মিত মাসিক চাঁদা দাবি করেন। থানায় নিয়মিত মাসিক চাঁদা না ব্যাবসা করতে ঝামেলা হবে বলে ভয় দেখান। বদলগাছি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের অটোরিকশাচালক আক্কেল আলী অটোরিকশা নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জে যাচ্ছিলেন। ভোর পাঁচটার দিকে আক্কেলপুর পৌরশহরের সোনামুখী এলাকায় স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটকায়। এরপর তাঁরা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোরিকশাসহ আক্কেল আলীকে থানায় নিয়ে আসে। খবর পেয়ে আক্কেল আলীর স্বজনেরা আক্কেলপুর থানায় চলে আসেন। আক্কেল আলীকে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। আক্কেল আলীর অটোরিকশাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রীর কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন এসআই আমিনুল ইসলাম। দর কষাকষির একপর্যায়ে ৫০ হাজার টাকায় রফা হয়। এরপর থানা থেকে আক্কেল আলীর অটোরিকশাটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী আব্দুর রশিদ বলেন, ছেলে মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় আমরা উভয় পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। মেয়ের চেয়ে আমার ছেলের বয়স কম ছিল। কিন্তুু আমাদের করা অভিযোগকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু মেয়ে পক্ষকেই প্রাধান্য দিয়েছে এসআই আমিন। গভীর রাতে বাড়িতে এসে আমাকে ভয় দেখিয়ে গেছে। আমার কাছ থেকে ২০ টাকা ঘুষ দাবী করেছিল। অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। তার পরেও আমাদের থানায় ডেকে এনে প্রায় ৯ ঘন্টা আটক রেখে ওসি স্যারের কথা বলে আবারও ১০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।
তিলকপুর বাজারের ভাংড়ি ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম মোংলা বলেন, আমি ছোট একটি ব্যবসা করি। এখানেই পরত্যাক্ত ভাংড়ি মালামাল কিনি, এখানেই বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে এসআই আমিন স্যার মাসিক ৫ হাজার টাকা চেয়েছে। আমি দিতে চাইনি, তখন তিনি বলেন ব্যবসা করলে দিতে হবে, না হলে ব্যবসা বন্ধ করে বাড়িতে গিয়ে বসে থাকো।
আক্কেল আলি নামের এক অটোরিকশা চালক জানান, কয়েকদিন আগে খুব ভোরে আলু রোপনের জন্য তিনি শশুড়বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে পৌর সদরের সোনামুখী মাজার এলাকায় ছিনতাইয়ের ভয়ে স্থানীয়রা তাকে সামনে যেতে নিষেধ করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসলে এসআই আমিনুর তার পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে অটোরিকশা ছেড়ে দেন এবং তাকে চুরি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
আক্কেলপুর থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম এসকল অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, আমি এই থানায় সবচেয়ে বেশি কাজ করি, তাই আমার বিরুদ্ধে তৃতীয়পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আক্কেলপুর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলামের বলেন, তার বিষয়ে এসকল অভিযোগ আমার জানা নেই। তারপরও বিষয় গুলো তদন্ত করে দেখে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএজি