জাবিতে চারুকলা ভবন নির্মাণ নিয়ে মুখোমুখি দুই পক্ষ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণ নিয়ে মুখোমুখি হয়েছে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও তিন প্ল্যাটফর্মের সম্মিলিত একটি পক্ষ। এই তিন প্ল্যাটফর্মে আছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷
এর আগে, দুপুর ১২ টা থেকে দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ এসময় আটকা পড়েন প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তারা। পরে রাত ৯ টা পেরিয়ে গেলেও তারা অবরোধ তুলে না নিলে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান সেখানে আসেন।
এসময় উপাচার্য চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সময়দান ও আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান৷ সর্বশেষ রাত ১১ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন।
এদিকে, খবর পেয়ে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ, গণ অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়৷ এসময় তারা 'ভারতীয় আগ্রাসন, মানি না মানব না', 'দিল্লী না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা', 'ময়েজের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে' ভারতীয় অর্থায়নে ভবন নির্মাণ চলবে না' প্রভৃতি স্লোগান দিতে থাকেন। সর্বশেষ রাত ১১ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে।
এসময় জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ময়েজ উদ্দিন কীভাবে প্রকল্প পরিচালক হয়? ভারতীয় অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ভবন নির্মাণ করা যাবে না। প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে ভবন হবে তবুও ভারতীয় অর্থায়ন চলবে না।
আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার আনজুম বলেন, চারুকলা ভবন হোক। তবে সেটি ভারতীয় অর্থায়নে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে বা বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ভবন নির্মাণ হতে পারে।
ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, আমরা ভবন নির্মাণের বিপক্ষে নই। তবে প্রাণ-প্রকৃতি বিপর্যস্ত করে অপরিকল্পিত ভবন চাই না। দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং লেকের পাশেই বন উজাড় করে চারুকলা ভবন নির্মাণের স্থান পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে এসেছি। সে সময় ছাত্রলীগের উপস্থিতিতে তারা ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা করে। কিন্তু আমরা যৌক্তিক দাবিতে অনড় ছিলাম। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনায় বসে। সর্বশেষ গতদিনের আলোচনা সভা মূলতবী ছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আগেই কোন কাজ শুরু করা চলবে না।
এর আগে, এ বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের বর্ধিতাংশের লেকের পাশে দেড় শতাধিক গাছ কেটে চারুকলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সুযোগে কয়েক ঘণ্টায় বদলে ফেলা হয় পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল খ্যাত ‘মেইন বার্ডস’ লেকের এক পাশের চিত্র। প্রাণপ্রকৃতি নষ্ট করে ভবন নির্মানের প্রতিবাদ জানান পরিবেশ সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই সময় ছাত্রলীগের মদদে প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ভবন নির্মাণকাজ চালিয়ে যান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে আগস্টে সরকার পতনের পর থমকে যায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অর্থায়নে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ। চলমান এ প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ভারতীয় অর্থায়ন রয়েছে। একই সাথে ভারতীয় অর্থায়ন বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা৷
কেএ