Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হিট স্ট্রোক: বাঁচতে হলে জানতে হবে 

হিট স্ট্রোক: বাঁচতে হলে জানতে হবে 

হিট স্ট্রোক হলো একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়ে যায়। চলুন জেনে নেই হিট স্ট্রোক কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার সহো খুটিনাটি সবকিছু-

হিট স্ট্রোকের কারণসমূহ:

আতপাঘাত বা "হিট স্ট্রোক" তখনই ঘটে যখন শরীরের তাপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অতিরিক্ত বিপাকের ফলে উৎপন্ন তাপ, বাহ্যিক পরিবেশে অত্যধিক তা অথবা শরীর তাপ হারাতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। হিট স্ট্রোক কয়েকটি কারণে হতে পারে। তবে চলুন এবার কারণগুলো দেখে নেই-

*পারিপার্শ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা।

*শরীরে পানিশূন্যতা বা মিনারেলস এর অভাব।

*কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায়, যেমন- ডাই-ইউরেটিক্স, বিটা ব্লকারস, অ্যালকোহল।

*হার্ট এর বা স্কিন এর অসুখে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ:

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এর লক্ষণ গুলো হলো—

* শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৫ ডিগ্রিº ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।

* ঘাম বন্ধ হয়ে যায়।

* ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।

* নিশ্বাস দ্রুত হয়।

* নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।

* রক্তচাপ কমে যায়।

* খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।

* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।

* রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। 

রোগ নির্ণয়:

আতপঘাত বা হিট স্ট্রোক নির্ণয়ের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি সম্পাদন করা হয় (তবে এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়):

*পূর্ণ রক্তগণনা পরীক্ষা (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, সিবিসি)

*প্রোথ্রম্বিন সময়/আংশিক থ্রম্বোপ্লাস্টিন সময় (প্রোথ্রম্বিন সময় বা পিটি এবং পার্শিয়াল থ্রম্বোপ্লাস্টিন টাইম বা পিটিটি)

*রক্তের গ্যাস পরীক্ষা (ব্লাড গ্যাস টেস্ট)

*প্রস্রাব পরীক্ষা (ইউরিন টেস্ট) 

হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়:

প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—

* শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

* যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।

* শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

* কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি। 

প্রতিরোধের উপায়:

গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো—

* হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো।

* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।

* বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।

* বাইরে যাঁরা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।

* প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।

* তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।

* রোদের মধ্যে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতেই হয়, তবে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে ও প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে। 

আক্রান্ত হলে করণীয়:

প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো—

* দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। যদি সম্ভব হয়, ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন।

* ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।

* প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না।

কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তবে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে চিকিৎসা করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যাঁরা থাকবেন তাঁদের করণীয় হলো—

* রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান।

* তাঁর কাপড় খুলে দিন।

* শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।

* সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন।

* রোগীর জ্ঞান থাকলে তাঁকে খাবার স্যালাইন দিন।

* দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

* সব সময় খেয়াল রাখবেন হিট স্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে।

 

লিখেছেন- মো. আজিজুল হক রতন সরকার

কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার ছাত্র ফেডারেশন।
টিএ

নামাজের সময়সূচী

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪