মানুষের অবস্থাকে নয়, মানুষের শ্রমকে সম্মান করুন
পৃথিবী সৃষ্টি থেকেই মানুষকে তার কর্মের মাধ্যমেই জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে হচ্ছে। কর্ম ছাড়া কখনোই জীবনকে অর্জন করা যায়না। তবে এই কর্মের মধ্যেও রয়েছে ভাগ। এই কর্ম দ্বারাই সমাজ আবার মানুষকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে। এরমধ্যে শ্রমিক শ্রেণীর কর্ম আমাদের জীবনকে করেছে অনেকটা সহজ আর সাবলীল। নিজেদের প্রয়োজনে তাদের শ্রমকে ব্যবহার করলেও আমরা তাদের সঠিক মূল্যায়ন করিনা। আজ পহেলা মে। বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন একটি দিন। ১৯ দশকের গোড়ার দিকের কথা, শ্রমিকরা তখনও সপ্তাহের ছয়দিনই গড়ে প্রায় ১০-১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করতো, কিন্তু তার বিপরীতে মিলতো অতি নগণ্য মজুরি। অনিরাপদ পরিবেশ, রোগ-ব্যাধি, আঘাত আর মৃত্যুই ছিল তাদের নির্মম সঙ্গী।
১৮৬০ সালে মজুরি না কেটে শ্রমিকরা দৈনিক কাজের সময় ৮ ঘন্টা করার দাবিতে আন্দোলন শুধু করে। ঢেলে দেয় বুকের তাজা রক্ত। মে দিবসের নেপথ্য কাহিনী হয়তো সকলের জানা। ১৮২০-১৮৪০ সাল পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন ও ধর্মঘট করে। ১৮৬২-১৮৬৩ গড়ে ওঠে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। এই সময়ের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে, মালিকেরা কর্মক্ষেত্রে কম মজুরিতে নারী শ্রমিক নিয়োগ করতে থাকে।
এরপর আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের অবসান হলে, দ্রুত শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে প্রসার ঘটে শ্রমিক আন্দোলনের। ১৮৮১ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় "আমেরিকার ফেডারেশন অব লেবার"। ১৮৮৪ সালে ৭ই অক্টোবরে চতুর্থ সম্মেলনে গৃহীত হয় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যেখানে ৮ ঘন্টাকে আইনগত কার্যদিবস গণ্য করার কথা বলা হয়। ১৮৬৮ সালে আমেরিকার আইনসভা ৮ ঘন্টার কাজ বলে একটা আইন পাশ করলে কার্ল মার্কসসহ বিভিন্ন নেতারা এই কার্যক্রমে সহমত হলেও সে আইন কার্যকর হয় না।
১৮৮৫ সালে আন্দোলন ব্যাপকতর রূপ নিতে থাকে। ১৮৮৬ সালে ১লা মে ৫লাখ শ্রমিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করলে এ আন্দোলনে শাসকদল কিছুটা ভীতু হয়ে পরে। ৩রা মে ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় পুলিশের নির্মম আক্রমণে প্রাণ হারায় ৬জন শ্রমিক। ৪ঠা মে মার্কেট স্কয়ারে শ্রমিকদের সুবিশাল সভায় পুলিশেরা গুলি চালায় ও গ্রেফতার করে ৪ শ্রমিক নেতাকে।
এই আন্দোলনের স্বীকৃতি প্রদানে ১৮৯০ সালে প্যারিস ১লা মে তারিখকে শ্রমিক দিবস পালনের অনুমতি প্রদান করে। ১৮৯৬ সালে রাশিয়ায়, ১৯২৪ সালে চীনে, ১৯৩৩ সালে জার্মানিসহ পরবর্তীতে বিশ্বের সকল দেশে মে দিবস পালিত হতে থাকে৷
বিশ্বের প্রতিটি দেশে এই দিনটি পালিত হলেও এখনও ঘোচেনি শ্রমিকদের কষ্ট। এখনো হাজারো শ্রমিক প্রতিদিনই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পাচ্ছে না তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মজুরি। বর্তমান নভেল করোনাভাইরাস যেন তাদের জীবনকে ফেলে দিয়েছে আরও এক অনিশ্চিত হুমকির মুখে। কর্মহীন এসব মানুষের অনেকই পাচ্ছে না যথাযথ সাহায্য। অনাহারে রাত্রি যাপন করছে হাজারো শ্রমিক পরিবার।
শুধু আজকের দিনই নয়, আসুন প্রতিদিন তাদের কথা ভাবি। সকলে মানবিক হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়। তাদের শ্রমকে সম্মান করি,তাদেরকে সম্মান করি। দিন শেষে তাদের শ্রমের ঘামেই কিন্তু আমরা মখমলের পালংকে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারি। মানুষকে তার অবস্থা দিয়ে নয়, তার কাজ দিয়ে সম্মান করতে হবে। তবেই পৃথিবী হবে শান্তির।
সকল শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মে দিবসের শুভেচ্ছা ও বিনম্র শ্রদ্ধা।
শুভেচ্ছান্তে- ডাঃ এসএম বাদশা মিয়া
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র ফেডারেশন।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক- মোঃ আজিজুল হক রতন সরকার
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র ফেডারেশন।।
কেএ