Deshdeshantor24com: Bangla news portal

ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’- কি ভাবছে শিক্ষার্থীরা 

‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’- কি ভাবছে শিক্ষার্থীরা 
গ্রাফিকস দেশ দেশান্তর ২৪.কম

গত কয়েক বছর ধরে পরিবেশে অনেক অস্বাভাবিক ও নজিরবিহীন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি প্রকৃতির প্রধান উপাদান যেমন জল, বন, জমি এবং সমগ্র বায়ুমণ্ডলকে খারাপভাবে প্রভাবিত করছে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতটাই তীব্র যে পৃথিবীর অস্তিত্ব, এর বায়ুমণ্ডল এবং সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্বই সংকটের মুখে। এর পাশাপাশি মানুষের আচরণে জীববৈচিত্র্যের ক্রমাগত ধ্বংস একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আজ ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

প্রতিবছরের মতো এবারও উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনন্য স্লোগান—"পরিবেশ ভোগের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়"। এমতাবস্থায় বর্তমান সময়ে পরিবেশের বিপর্যয় এবং এর থেকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের কি ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাই তুলে ধরছেন সংবাদকর্মী ফারহান হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের  শিক্ষার্থী  উম্মে হালিমা তমা  বলেন, উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অন্ধ দৌড়ে আমরা পরিবেশের উপাদানগুলিকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছি। ভোগবাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে ভোগের অনিয়ন্ত্রিত অভ্যাসের কারণে সম্পদের সীমাহীন শোষণের প্রবণতা এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। এই শোষণ এমন মাত্রায় বেড়েছে যে আমাদের পরিবেশের উপাদানে ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। পরিবেশ ও সকল জীবের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এমতাবস্থায় মানুষের কর্মকাণ্ড যখন অনিয়ন্ত্রিত এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে, তখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পরিবেশ নানা সমস্যায় ভুগতে শুরু করে। মনে হচ্ছে মানবসমাজ প্রকৃতির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে এবং নিজেকে প্রকৃতির চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। জেনেও প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েও তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। দূষণ রোধে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। উন্নয়নের জন্য প্রকৃতির ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। গাছ, নদী, পুকুর, জমি, জল, বন ও প্রাণী প্রজাতি বাঁচাতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থান। মানুষ তার সূচনা লগ্ন থেকেই প্রকৃতির থেকে তার জীবন রক্ষার বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আসছে। পরবর্তীতে মানুষই প্রকৃতি ধ্বংসের মূলকারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এমন অকৃতজ্ঞতা পরিহার করতে হবে। বেশি বেশি বনায়ন, বিষাক্তগ্যাস নিঃসরণ বন্ধে সবাইকে সচেষ্ট হবে। সর্বোপরি, কোন দিবস বা শুধু আলোচনা বা সম্মেলন নয়, পৃথিবী ও পরিবেশ রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এ দিকে প্রয়াস চালাতে হবে। কারণ একে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের সমান।

ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের ইইই বিভাগের  শিক্ষার্থী  আল নাহিয়ান ফিজান বলেন, কিভাবে কখন বৃক্ষ রোপন করতে হবে সেই ব্যাপারে ধারনা নিয়ে তারপর রোপন করা উচিত। সরকারের যেমন জবাবদিহিতা করতে হবে, তেমনি ভাবে জনগন কে আইন মানতে বাধ্য হতে হবে, আইন কে কঠোর হতে হবে। পরিবেশের সবচেয়ে বড় হুমকি প্লাষ্টিক,  প্লাষ্টিকের বিকল্প সব সময়ই ছিলো, তা হলো পাট। 

আরো অনেক দিক আছে যেগুলো চাইলেই ঠিক করা সম্ভব যেমন, অপরিকল্পিত বন উজার, অপরিকল্পিত নগরায়ন, কারখানার বর্জ্য, পরিবহনের বিষাক্ত ধোয়া ইত্যাদি। পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে বেশি সচেতন আমাদেরকেই হতে হবে। প্রতিটা বছর পরিবেশ দিবস আসবে, সব সময় দিনটা আমাদের কে নাড়া দিয়া যাবে। সচেতনতা সবাই গ্রহন না করলে, এই দিবসের কোনো গুরত্ব থাকবে না।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিরিং বিভাগের  শিক্ষার্থী  মাহমুদুল হাসান সাদ বলেন, ১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রতিবছর ৫ জুন  বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হচ্ছে। এই বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রচারণা" আমাদের জমি"শ্লোগানের অধীনে ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ এবং খরা প্রতিরোধের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আমাদের পরিবেশ নানাভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে জনগণের পাশাপাশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী সমন্বয়। এজন্য প্রয়োজন —

কলকারখানা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি ঘরের বর্জ্য পানি পরিশোধন করে পুর্নব্যবহারের ব্যবস্থাা।কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যের পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থাপনা। অস্বাস্থ্যকর ইটভাটা ও কালো ধোয়া উৎকিরণকারী সমস্ত যানবাহনকে রাস্তায় চলাচলে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা। কৃষিকাজ, গবাদি পশু পালন ও মাছ চাষে অপরিকল্পিত ও অপরিমিত রাসায়নিক এর ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করা। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ যেমন: টেকসই বনায়ন অনুশীলন, জলাভূমি সুরক্ষা এবং টেকসায় কৃষির মত ব্যবস্থা গ্রহণ।নবায়নযোগ্য শক্তি এবং শক্তি দক্ষতার ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার মতো ব্যবস্থা। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ যেমন: বিপন্ন প্রজাতি ও তাদের আবাসস্থল রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের প্রচারের মতো ব্যবস্থা। 

সামগ্রিকভাবে পরিবেশগত অবক্ষয়ের কারণ ও পরিস্থিতি গুলোকে চিনতে এবং পরিবেশ রক্ষা করতে এবং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে এমন সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলিকে উন্নীত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস অনুষদের  শিক্ষার্থী সাকিব শাহ্ বলেন, মহাবিশ্বে একমাত্র পৃথিবীই বাসযোগ্য স্থান। কিন্তু এ বাসযোগ্য স্থান দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আর এরজন্য দায়ী আমরা। বিনা কারণে গাছকাটা, কার্বন নিঃসরণ, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে আজকে জলবায়ুর এমন পরিবর্তন দেখা লাগছে। পৃথিবীটা একটা গ্রিন হাউজে পরিণত হচ্ছে। বন্যা, খরা হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় সহ নানান প্রাকৃতিক সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি হরহামেশাই। প্রাকৃতির এমন বিরূপ আচরণ গত শতাব্দীতেও কখনও দেখা যায় নি। তাই এখন পরিবেশ রক্ষায় আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর প্রায় ১০০ জনের ২৪ জন তরুণ আর তরুণদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তাই আমাদের বাসযোগ্য ও একমাত্র আশ্রয়স্থলকে রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদেরই নিতে হবে। পরিবেশ কর্মীদের সাথে একযোগে তরুণদের কাজ করতে হবে বেশি বেশি গাছ বৃক্ষরোপণ ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করতে হবে এবং পরিবেশের ক্ষতি করে এমন বিষয় সম্মিলিতভাবে রোধ করতে হবে। 

প্রিয় পাঠক, আপনিও দেশদেশান্তর২৪.কম অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। আত্মকথা, লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন-[email protected]-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

 
কেএ

নামাজের সময়সূচী

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Masjid
ফজর ৪:৪১
জোহর ১২:০৭
আসর ৪:২৯
মাগরিব ৬:১৪
ইশা ৭:২৮
সূর্যোদয় ৫:৫৬
সূর্যাস্ত ৬:১৪