বিশ্ববিদ্যালয় দিবস নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা
দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে লক্ষ্যে ২০০১ সালে নোয়াখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার আলোকে ২০০১-এর ১৫ জুলাই সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা আইন জারি হয়। ফলে ১৫ জুলাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
২০০৬ সালে ৪ টি বিভাগ,১৩ জন শিক্ষক,১৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদ ও ২টি ইনস্টিটিউট মিলে ৩৩টি বিভাগে বর্তমানে ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছেন। গত ১৮ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রসারে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাবনা, অনুভূতি ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন নোবিপ্রবি প্রতিনিধি মো. আবদুল্লাহ আল নাঈম।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর শাওন বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে একটা পরিচয়,ভালোবাসা ও আবেগের নাম।এটি আমার দ্বিতীয় বাড়ি।শিক্ষা জীবনের অন্যতম সুন্দর সময় কাটাচ্ছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।নানামুখী সংকটে জর্জরিত হওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সুনামের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শিক্ষা,গবেষণা,শিক্ষাসহায়ক কার্যক্রম এবং নিজ গুণাবলিতে দেশ-বিদেশে অনন্য হয়ে উঠুক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।উন্নত বিশ্বের রোল মডেল হোক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শারারা বিনতে জামান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তার দীর্ঘকালের যাত্রার ১৮ টি আবর্তন পেরিয়ে ১৯ তম বছরে পদার্পণ করেছে। এই ১৮ বছর এ প্রতিষ্ঠানটি হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম দিয়েছে এবং দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জায়গা করতে পেরেছে,যা একজন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্বের বিষয়। এই ১৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটির একাডেমিক দিক থেকে সাফল্য প্রকাশ পেয়েছে ঠিকই,তবে অবকাঠামোগত বিকাশ সময়ের সাথে তাল মিলাতে পারেনি। অবকাঠামোগত দিক দিয়ে আমাদের শ্রেণীকক্ষের সংকট, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে প্রচুর লোডশেডিং, লবনাক্ত পানি ইত্যাদি সমস্যা এখনো নোবিপ্রবিয়ানদের আশাহত করেই যাচ্ছে। তবুও আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাস নিয়ে আমাদের স্বপ্নের শেষ নেই, নিজের স্বপ্নের সমান উঁচুতে দেখতে চাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে। আমার বিশ্বাস, সামনের বছরগুলোতে নোবিপ্রোবি হয়ে উঠবে সারা বাংলাদেশ এর শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে একটি।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, উপকূলবর্তী এলাকা নোয়াখালী অঞ্চলের জ্ঞানের আলোকবর্তীকা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তার ১৮ টি বসন্ত পেরিয়ে ১৯ তম বসন্তে পদার্পণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতিমধ্যে যুগের চাহিদা মেটাতে এবং বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গঠন করতে প্রয়োজনীয় দক্ষ-মেধাবী জনবল তৈরীতে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে চলেছে।তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের পাশাপাশি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম ভরসার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতি বছর হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ভরসার বিন্দুর জায়গার নাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।দেশের উন্নয়নে বেশ গুরুতৃবপূর্ণ ভূমিকা রাখা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত অংশীদার হতে পারা বেশ আনন্দের বলেই বোধ করি।সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে নোবিপ্রবি এগিয়ে যাক তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে।দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক নতুন বছরে এটাই কামনা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবীবা ইশা বলেন, স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এক রাশ আশা নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে।আমিও এর ব্যতিক্রম নই।লালিত স্বপ্ন পূরনের প্রত্যাশা নিয়ে আমার এই স্বপ্নভূমিতে আগমন। স্বপ্নভূমির একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। ইতোমধ্যে নোবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার মাধ্যমে দেশ বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করছে।বিশ্বপরিমন্ডলে ছড়িয়ে পড়বে নোবিপ্রবির সুনাম এই প্রত্যাশা রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বছর পরও কিছু সীমাবদ্ধতা এখনও পীড়া দেয়।একাডেমিক-৩ হয়ে গেলে চাহিদার সিংহভাগই সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকিতে আশা রাখি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টে গুরুত্ব দিবে,শিক্ষার্থী বান্ধব এবং প্রযুক্তির দিক থেকে আরো উন্নত হবে।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তৌফিক আল মাহমুদ বলেন, নিজের বিশ্ববিদ্যালয় বা ক্যাম্পাস সবার কাছে ভালো লাগার ও আবেগের জায়গা।কিন্তু দিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স বাড়লেও শিক্ষার পরিবেশ,আবাসন সুবিধা, ক্লাস রুম সংকট, শিক্ষক সংকট,ল্যাব ও লাইব্রেরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আশানুরূপভাবে প্রসারিত হয়নি।একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট মানসম্মত ল্যাব থাকাটা জরুরি, যা সব বিভাগে নেই। এছাড়াও প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গড়ে ওঠেনি মুক্তমঞ্চ, টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া, জিমনেসিয়াম ইত্যাদি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এটাই আশা করি সব ধরনের সীমাবদ্ধতা ও সংকট দ্রুত নিরসন হোক। সেই সঙ্গে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণা ও দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবায় অবদান রাখবে সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী বিবি হালিমা জবা বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় একটি দেশের দর্শন। কারণ, এখানে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করা হয়। ঠিক তেমন নোবিপ্রবি আমার মনের শত শত বদ্ধ কুঠিরের চাবি। শুধু আমার একার নয় বরং নোবিপ্রবি হাজারো শিক্ষার্থীর পরিচয়, অস্তিত্ব,অহংকার এবং স্বপ্ন পূরণের স্থায়ী ঠিকানা। ১৯তম বর্ষে পদার্পণ করছে ভালোবাসার বিদ্যাপীঠ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।নোবিপ্রবি প্রতিষ্ঠার পর হতে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার হয়ে ভালো অবস্থানে এলেও এখনো রয়ে গেছে অনেক সংকট। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এখনো শিক্ষার্থীদের বাস সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।অনেক সময় শিক্ষার্থীদের দরজার সামনে ঝুলে আসতে হয়। বিভিন্ন সময় বাস বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও তা এখনও যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়াও নোবিপ্রবির কিছু বিভাগ এখনও ক্লাসরুম সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
এমতাবস্থায় প্রশাসনের উচিত পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার জন্য শ্রেণিকক্ষ বাড়ানো। কিছু বিভাগে তীব্র ভাবে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট যার কারণে পিছিয়ে পড়ছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাই এই সংকট নিরসনে শিক্ষকদের ছুটি কমিয়ে দেওয়া অথবা খন্ড-কালীন শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় বহাল থাকবে। ১৯ তম বর্ষে আমার প্রত্যাশা থাকবে একটি সুস্থ, নিরাপদ ক্যাম্পাস যা সাফল্য ও সগৌরবে এগিয়ে যাবে।
কেএ