প্রকাশ্য রাজনীতি নাকি আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিকস
বিগত পর্বে বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নাগরিকের ধর্ম, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতা, মতামত পোষণ তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সংগঠনের স্বাধীনতার বিষয়ে যতদূর সম্ভব আলোকপাত করা হয়েছিল। সে পর্বের বিষয় এবং বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতায় বিভিন্ন জনের প্রতিক্রিয়ায় কিছুটা উত্তাপ টের পাওয়া গেছে বৈকি। সম্মানিত পাঠকগণের চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি গত পর্বের লেখার টাইটেল বা শিরোনাম যতটুকু মনোযোগ কেড়েছে সে তুলনায় লেখার বিষয়বস্তুতে কেউ আরেকটু মনোযোগ দিলে সম্ভবত বেশি ভালো হত।
চলতি বছর আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অঘোষিত রাজতন্ত্রের পতনের পর গত শতকের ‘৯০ এর পর যে কোন বিবেচনায় জাতি যখন অধিকতর ঐক্যবদ্ধ, যখন দেশের কল্যাণে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত অধিকতর জরুরী ঠিক সে সময় দেশের প্রায় ৩৩ টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরির পথরূদ্ধ করার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার প্রবণতার প্রেক্ষাপটে এবং বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নেতৃবৃন্দের ভূমিকা-বিশেষত আমার প্রাণের বিদ্যাপিঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফ্যাসীবাদ বিরোধী আন্দোলনের ভূমিকার পটভূমি থেকেই বিষয় নির্বাচন ও ৪ পর্বের ধারাবাহিক লেখার অবতারণা।
জার্মান বংশদ্ভূত আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী এবং জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক Dr. Amitai Etzioni এর মতে "It is so much easier to extol the virtues of civility than to talk civilly about the virtues we need to uphold." সরল বাংলায় বললে-সভ্যতার যেসব গুণাবলী সমাজে প্রতিষ্ঠা করা উচিত সে সম্পর্কে সভ্য ভাবে কথা বলার চেয়ে সভ্যতার গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করা বা তা নিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা অধিকতর সহজ।
সমাজে এখন মিষ্টি কথার মন ভুলানো গল্পের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে সাধারণ ট্যাগ দিয়ে আলাদা করা হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে। প্রাসঙ্গিক কারণে প্রশ্ন তো করাই যায় যে, তাহলে অসাধারণ কে? ১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করেছিলেন। অথচ দেশে বর্তমানে কোন সামরিক শাসন না থাকলেও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে অন্তরালে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি দেশের সভ্যতার অন্যতম মাপকাঠি সংশ্লিষ্ট দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের পরিবেশ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্ক, উদারনৈতিকতা, উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণার সুযোগ। রাষ্ট্র পরিচালনা ও সরকার ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে উদার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সভ্যতার আরও একটি বড় মাপের ইন্ডিকেটর।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ভিত্তিক নিজস্ব উইং না থাকলেও বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস বিশ্বের অপরাপর অংশের চেয়ে ভিন্ন এবং এই ভূখণ্ডের বিবেচনায় তা রীতিমত প্রাসঙ্গিক ও বাস্তব। এদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা, ইতিহাস ও বাস্তবতা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
বিগত দেড় দশকের আওয়ামী দুঃশাসনকালে প্রতিষ্ঠিত অধিকারহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন ক্ষোভ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার পরম আকাঙ্খা থেকে সৃষ্ট আগ্নেয়গিরিসম স্পৃহা থেকেই ২০২৪ এর ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি রচিত হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব তরুণ শিক্ষার্থীদের হাতে থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, এ আন্দোলনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল মত, সকল পথ ও সকল পেশার মানুষের নৈতিক সমর্থন ছিল। আর এ আন্দোলনের পটভূমি একদিনে রচিত হয়নি, বরং হাসিনার ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির ক্রমাগত আন্দোলন সংগ্রামে তা রচিত হয়েছে-যে আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে দলীয় বা রাজনৈতিক সংগঠন ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা উঠেছে। সত্যি বলতে বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে ভালো ও মন্দ দুই প্রকৃতির উদাহরণই খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই বলে ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি ও চর্চার দিকটার সংস্কারের কথা না ভেবে নিষিদ্ধকরণকেই কেন উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হল। এর পিছনে অবশ্যই সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধি আছে। হয়তো কোন একটা পক্ষের মননেই ছিল যে কোন মুহূর্তে সুযোগ পেলেই ঝুপ বুঝে কুপ দিতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধে আসল লাভটা কার বা কাদের? অবশ্যই যারা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, অবশ্যই যারা কোন চেক এন্ড ব্যালেন্স ও জবাবদিহিতার আওতায় থাকতে চায় না-লাভটা তাদেরই। কারণ যারা গোপনে নিজ স্বার্থ লাভের এবং নিরবে-নিরাপদে প্রস্থানের আগ্রহী তারা কি করে চাইবে সমগ্র দেশে উদারনৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা হোক? শান্তি ও গণতন্ত্রকামী সকল মতের, সকল পথের মানুষের সমন্বয়ে উদারনৈতিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছাড়া সভ্য হওয়ার ভিন্ন কোন পথ আছে কি? নাকি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না করে সভ্যতার বুলি আউড়ানোর সহজ কাজটিই মূল উদ্দেশ্য। গণতন্ত্রহীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিহীন সমাজের নানান মনভুলানো গল্প শুনানো যে ফ্যাসিবাদেরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য তা অভ্যুত্থানের ৭ দিনের মাথায় বেমালুম ভুলে গেলাম আমরা। নইলে ছাত্র রাজনীতির সংস্কারের দিকে না হেঁটে তা বন্ধ বা স্থগিত বা নিষিদ্ধকরণের সহজ পথে হাটলাম কি করে। এদেশের সকল প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিদগ্ধজনের, বিশ্বের নানা প্রান্তের মনিষীদের বাণী সত্য হয়ে যায় কিন্তু আপসোস হয় যখন দেখা যায় যে বাণীগুলোর নেগেটিভ অংশ সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
অতি সম্প্রতি পতন হওয়া ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে কি দেখেছি আমরা? শেখ হাসিনা দেশের সংগ্রামের ইতিহাস দখল করা সহ সমগ্র দেশটাকেই পৈতৃক সম্পত্তি হিসেবে দখল করে জাতির উপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে ছিল। বিরোধী মত দমন করে আওয়ামী লীগের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে অপরাপর রাজনৈতিক দলসমূহকে, এমনকি রাজনৈতিক ভিন্নমত ও প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার অপচেষ্টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মত একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তিকে ভাঙ্গার ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। রাজনৈতিক দল ভাঙ্গা আর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা-বিরাজনীতিকরণেরই নামান্তর নয় কি? কারণ এ দুটোর ফলাফল তো একই। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় বিরাজনীতিকরণের যে কোন উদ্যোগ কি ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরিতে কোনরূপ ভূমিকা রাখবে না?
ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে লেখক
আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ’র ‘হেড হান্ট’ তত্ত্বের কথা মোটামুটি অনেকেরই জানা আছে। বর্তমান সিঙ্গাপুর একসময় ব্রিটিশদের অধীন একটি ক্রাউন কলোনি ছিল। ১৯৬৫ সালে উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় দেশটির সম্পদের কোনরূপ অভাব না থাকলেও যোগ্য স্থানে যোগ্য লোকের এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির অভাব ছিল। তাই তিনি সর্বদা রাষ্ট্রের কল্যাণে দায়িত্ব প্রদানের জন্য কাকে বা কোন ধরণের ব্যক্তিকে কোন স্থানে বসানো যায় সে ভাবনাতে মগ্ন থাকতেন। একবার লি কুয়ান ইউ’র ফিলিপাইন সফরের সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, "আপনি অবসর সময় কাটান কীভাবে?” এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “এমনিতেই আমার অবসর খুব কম, তবু যেটুকু অবসর পাই তার শতকরা ৩০ ভাগ কাটাই ‘হেড হান্ট (Head Hunt)’ করে।” সেই থেকেই দেশ পরিচালনায় Head Hunt তত্ত্বের উদ্ভব। সিঙ্গাপুরের বিবেচনায় লি কুয়ান ইউ যেমন বাস্তব, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একইভাবে প্রাসঙ্গিক ও বাস্তব। তিনি দৈহিকভাবে অবর্তমান থাকলেও তার নীতি ও আদর্শে গড়া বিএনপি’র দায়িত্বভার সামলানোর কাজটি সঠিকভাবেই পালন করছেন তার সুযোগ্য উত্তরসূরী দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি দেশের ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরিতে লি কুয়ান ইউ’র ন্যায় ‘হেড হান্ট (Head Hunt)’ করে তরুণদের মধ্যে মেধাবী ও নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরকে ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্ব প্রদান করছেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেশপ্রেম সদা জাগ্রত রাখতে এবং তাদেরকে সঠিকপথে রাখতে সময়ে সময়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করে তাদেরকে ভবিষ্যতে দেশপ্রেম ও বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছেন।
স্থান-কাল-আসন ভেদে যোগ্য স্থানে যোগ্য লোক না থাকায়, দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের দ্বারা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যর্থতার কারণে রাষ্ট্র এবং দেশের ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-মজুর, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা তথা আপামর জনসাধারণকে স্বাধীনতার পর বিগত ৫৩ বছরে বহুবার খেসারত দিতে হয়েছে। যতবার রাষ্ট্র হোচট খেয়েছে, ততবারই দেশের তরুণ সমাজ রুখে দাড়িয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু মুখে তারুণ্যের জয়গান গাইলেও তারুণ্যের বিকাশকে বরাবরই নানান গোষ্ঠী, বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। যদিও তরুণ সমাজ সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে, তবুও তারুণ্যের বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা যেন থামেই না।
প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ স্যার তাঁর লেখা ‘অসুস্থ রাজনীতি: বিভক্ত জাতি’ গ্রন্থের ‘এদেশে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জিয়াউর রহমানের’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “যে কোন জনপদে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে বিদ্যমান থাকে তিনটি নিয়ন্ত্রণকারী চ্যানেল। যেখানে রাজনৈতিক দল বিদ্যমান থাকে সেখানে দলই হয় নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশ দানের প্রথম এবং প্রধান চ্যানেল। রাজনৈতিক দলের কর্তৃত্ব দুর্বল হলে পুলিশ বাহিনীর হাতে এই দায়িত্ব এসে পড়ে। পরিস্থিতি আরো জটিল হলে সামরিক বাহিনী সরকারের সাহায্যে এগিয়ে আসে এইড টু সিভিল এডমিনিস্ট্রেশনের (Aid to civil administration) ফরম্যাটে।” দেশের কল্যাণে সময়োপযোগী নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, দেশ পরিচালনা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়নে শান্তিকামী ও গণতন্ত্রে প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাজনীতিবিদগণই সর্বদা নেতৃত্ব দিয়েছে। যে কোন দেশের সভ্য রাজনৈতিক দলসমূহই সংশ্লিষ্ট দেশের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু একজন ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ান কি একদিনে তৈরি হয়? জীবনব্যাপী নানান চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে নিজেকে দেশের কল্যাণের জন্য প্রস্তত করেই একজন সিজনড পলিটিশিয়ান তাঁর জীবন গড়ে তুলে।
সারা বিশ্বব্যাপীই শান্তিপ্রিয় ও গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদগণের অবদান অনস্বিকার্য। কিন্ত বিগত দেড় দশকের গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ানদের চেয়ে টেকনোক্রেট ও ব্যুরোক্রেটরা বেশি গুরুত্ব পাওয়ায় অলিখিতভাবেই একটি বিরাজনীতিকরণের প্রবণতা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠা করে গেছে ফ্যাসিবাদীরা। রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রকে একেবারে শিকড়ে প্রোথিত করার হীন কাজটি করে দেশের রাজনীতির যে অপূরণীয় ক্ষতি করে গেছে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা-ফ্যাসিবাদহীন সমাজে কেন আজও সে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে-সুধীজনদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
আমার মতে রাজনীতি হল সেই অহিংস নীতির সমাহার যার মাধ্যমে জাতি গোষ্ঠীর কল্যাণে সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইতিবাচক প্রেক্ষাপট তৈরি করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিজস্ব ভাবনা ও আদর্শ ধারণ এবং প্রচারের স্বাধীনতা রাজনীতির সবচেয়ে সুন্দরতম দিক- যার অবর্তমানে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ড সমাজে বিস্তৃতি লাভ করার সুযোগ পায়। অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকান্ড হতে নিভৃত করার অযুহাতে তখন পুলিশি রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। রাষ্ট্র তখন জনমানুষের থাকেনা-রাষ্ট্রের মালিক হয় অন্য কেউ। তাই সময় থাকতে সাধু সাবধান।
এএজি