শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির অবসান হোক
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি জাতি যত উন্নত হবে, তার শিক্ষাব্যবস্থা তত উন্নত এবং স্বচ্ছ হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন একটি জায়গা, যেখানে মেধা, যোগ্যতা, এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি হয়। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, তা শুধু শিক্ষার মানকেই নষ্ট করছে না, বরং পুরো জাতির অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিজিপিএ, গবেষণা, এবং পেশাগত অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। একজন শিক্ষককে শুধু একজন শিক্ষাদানকারী হিসেবে নয়, একজন আদর্শ নির্মাতা হিসেবেও দেখা হয়। কিন্তু যদি অর্থ, লবিং, এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে যোগ্যতার বদলে অযোগ্য ব্যক্তিরা এই পেশায় প্রবেশ করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা এবং আদর্শ থেকে বঞ্চিত হবে।
আজ আমরা এমন এক বাস্তবতায় বাস করছি যেখানে অনেক মেধাবী, যোগ্য প্রার্থী শুধুমাত্র প্রভাব ও অর্থের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য প্রার্থীরা বড় পদে আসীন হচ্ছেন। এই অযোগ্যদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান নিম্নগামী হচ্ছে, এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা তৈরি হচ্ছে। তারা দেখে যে যোগ্যতা ও মেধার কোনো মূল্য নেই, ফলে তাদের মনোবল ভেঙে যায় এবং সমাজের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধু জ্ঞান অর্জন নয়, বরং নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা, এবং দেশপ্রেম শেখানো। কিন্তু যখন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে, তখন তারা নিজেরা এই গুণাবলী থেকে বঞ্চিত থাকে এবং শিক্ষার্থীদেরও সঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেবল শিক্ষাগত মানেই পিছিয়ে থাকবে না, বরং নৈতিক দিক থেকেও দুর্বল হয়ে পড়বে।
শিক্ষাব্যবস্থায় যদি দুর্নীতির এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে আমরা খুব শিগগিরই এমন এক সমাজে বাস করব যেখানে মেধা নয়, প্রভাব এবং অর্থই সফলতার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই সমস্যার অবসান জরুরি। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং স্বাধীন তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে, যাতে প্রতিটি নিয়োগ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল আইন প্রণয়ন করাই যথেষ্ট নয়, বরং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সাহস না পায়।
সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের সমাজকে শিক্ষার গুরুত্ব, যোগ্যতার মূল্য, এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রতিটি অভিভাবক, শিক্ষার্থী, এবং নাগরিককে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি কেবল একক একটি সমস্যা নয়, এটি একটি জাতির ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি।
অতএব, এই সমস্যার সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মেধা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগই একটি সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে, শিক্ষাব্যবস্থা এবং আমাদের সমাজ দুই-ই ধ্বংসের মুখে পড়বে। এখনই সময় এই সমস্যার সমাধানে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার।
দুর্নীতি মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া উন্নত জাতি সম্ভব নয়—আসুন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই এক হয়ে কাজ করি।
টিএ